মিষ্টি সুবাস 

একটা মানুষের উপস্থিতি কতভাবে জানা সম্ভব? কেউ দৃষ্টিতে পড়লে,  তার ছোঁয়া পেলে কিংবা গলার স্বর শুনলে  ব্যক্তিটা যে কাছেই আছে সেটা তো বুঝা যায়। কিন্তু ঘ্রাণে? হ্যাঁ আজকে সে রকম একটা গল্প বলি।

তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আঙ্গিনায় পা দেওয়া মাত্রই চোখ দুটো কাউকে খুঁজে বেড়ায়। প্রতিবার যে মনের আশা পূর্ণ হতো,  এমন কিন্তু না। চোখে পড়ার আগেই কখনও কখনও হঠাৎ-ই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের চতুর্থ ইন্দ্রিয়টা সক্রিয় হয়ে  উঠতো। আবার হয়তো মনোযোগ ছিল অন্য কিছুতে কিন্তু সে আমার অজান্তেই কাছাকাছি চলে এসেছে,  তখন ঘ্রাণ শক্তি আমাকে মিষ্টি একটা বার্তা পৌঁছে দিতো। সে এসেছে, দেখা হবে। মনটা আনন্দে উদ্ভাসিত হতো।

আমাদের দুই আত্মার মিলন তো ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে আসার বহু আগেই হয়েছিল; মানে সম্পর্ক আমাদের জন্ম-জন্মান্তরের। মহান আল্লাহ তা আলা (পবিত্র কুরআন ৭৮ঃ৮) ঘোষণা করেছেন, “আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।”  তবে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এক সাথে পার্থিব পথ চলা আরম্ভ হয়েছে আজকের এই দিনে মানে ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে। কতটুকু দূরত্ব পার করেছি? নিশ্চয়ই কিছুটা। বিদেশে আস্তানা গেড়ে নানা  চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে চার সন্তান বড় করে তোলা সহজ কাজ নিশ্চয়ই না।  তবে এর জন্যে কাউকে যদি কৃতিত্ব হয় সেটা অবশ্য তাকেই দিবো। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে আমাদের এক সাথে চলার সার্থকতা কতটুকু? একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির অভিমত দিয়েছিলেন, “সফল বিয়ে বলতে স্ত্রীর সাথে শান্তিপূর্ণ থাকাকে বুঝায় না; বরং তাকে ছাড়া শান্তিতে থাকতে না পারাকে বুঝায়।” এতো দেখি ঠিক আমার অবস্থা। তাকে ছাড়া আমি বলতে গেলে একেবারেই অচল। 

সে আমাদের বাড়ির ‘গুগল’। আসল গুগলের যে সব প্রশ্নের উত্তর জানা নাই, সেগুলোও তার জানা। কোন বাচ্চার ডাক্তারের এপয়েনমেণ্ট কবে, কার জন্মদিনে কি উপহার কিনতে হবে, কোন অনুষ্ঠানে কোন পোশাক পরতে হবে জাতীয় প্রশ্নের উত্তর শুধু মাত্র তার কাছ থেকেই পাওয়া যায়। এই কারণে আমার ভোলা মনের উপর  চাপ অবশ্য কম পড়ে। কিন্তু তারপরেও কয়েকটা ক্ষেত্রে তার সাহায্য নিতে না পারায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়। সেগুলো হলো মাদার'স  ডে, তার জন্মদিন এবং আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে কি করলে সবচেয়ে ভালো হয় সেটা বের করা। এইবারের বার্ষিকী উপলক্ষে অনেক চিন্তা করার পর আমার অনুর্বর মস্তিষ্ক থেকে বের হলো,  যেহেতু করোনা কালে দূরে কোথাও যাওয়া সম্ভব না; আমার সব চেয়ে প্রিয় কিছু তাকে উপহার দেয়া। কিন্তু আবার ঝামেলায় পড়লাম। আমার প্রিয় কি এমন আছে? আমি ভালোবাসি লিখতে। সেই ভালোবাসার লেখা দিয়েই না  হয়  তাকে বলি, “ ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। সেই যে ছাত্র জীবনে একটু দেখা, একটু ছোঁয়া, একটু ঘ্রাণ পাওয়ার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকতাম, সেই আকাঙ্ক্ষা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। A Very Happy Anniversary to you!!  আর শেষের কথাটা,  তুমি কাছে কিংবা দূরে থাকো সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা কিন্তু আমি সারাক্ষণই পাই।” 

“কোথায় সে থাকে

কাছে না দূরে।

মিষ্টি একটা গন্ধ

রয়েছে ঘরটা জুড়ে।।” 

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২