মেরুদণ্ড বের করে ফেলো…...
রাজা: আমি ঠিক করেছি, আমার রাজত্বে কারোর মেরুদণ্ড থাকতে পারবে না।
মন্ত্রী: জী জাঁহাপনা, আপনি যখন বলেছেন, তখন সব জনগণের মেরুদণ্ড বের করে ফেলা হবে।
রাজা: কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষ তো মেরুদণ্ড নিয়ে জন্মায়।
মন্ত্রী: জী জাঁহাপনা, আপনি যদি বলেন, ওদের ধরে এনে, এক এক করে মেরুদণ্ড টেনে বের করে ফেলার এন্তেজাম করা যেতে পারে।
রাজা: এইটা কি একটা আক্কেলের কথা বললে। মেরুদণ্ড টেনে বের করতে গেলে, ব্যাটা জনগণ-তো সব অঘরে প্রাণ হারাবে। এমনিতেই শরীরের মধ্যে ফরমালিন, আর্সেনিক, ভেজালে আর শত ধরণের অসুখে ভরা। আমি ভেবেই পাই না ব্যাটারা যে কি করে কাজ-কর্ম করে!
মন্ত্রী: জী জাঁহাপনা, আমার মনে হয় সেটাই তো ভালো। কিছু আম জনতা মরলে তো সব দিক দিয়ে উত্তম। জনগণ যত কমবে দেশ চালাতে তত সুবিধা। বিরোধী দল হরতাল, মিছিল, ভাংচুরের জন্যে পাবলিক পাবে না।
রাজা: তুমি দেখছি গর্দভের গর্দভ, একেবারে দেশের সেরা গর্দভ। জনগণ ছাড়া কি আর দেশ চলে। পাবলিক সব মরে গেলে আমার সৈন্য, সামন্ত আর চেলা চামুণ্ডা কে হবে? ওরা ট্যাক্স না দিলে বিদেশের ব্যাংক একাউন্টে ডলার জমবে কি করে? ওদের মলিন চেহারা দেখিয়ে ফরেন এইড এনে; সাঙ্গ পাঙ্গদের টু পাইস কামানোর ব্যবস্থাও তো করতে হয়। তা ছাড়া ওরা বিদেশে যেয়ে গাধার খাটুনি দিয়ে আয় করে দেশে টাকা পাঠায় বলেই তো আমাদের এতো বাহাদুরি।
মন্ত্রী: জাঁহাপনা আমার তো মাথায় আসছে না এখন আমরা কি করতে পারি। জনগণ থাকতে হবে কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড বের করে নিতে হবে। এইটা আবার কি করে সম্ভব। উহু আমি আর ভাবতে পারছি না। ......দেখেন, দেখেন আমার মাথার মধ্যে এর মধ্যেই স্পার্ক করছে। যে কোন মুহূর্তে ধোঁয়া বের হবে।
রাজা: তোমাকে যে কেনো মন্ত্রী বানিয়েছিলাম? কোন জরুরী কাজ দিলেই মাথা গরম হতে থাকে, স্পার্ক হয় আর আমাকে ধোঁয়ার ভয় দেখাতে থাকো। এত দিনের চামচা না হলে, কবে তোমাকে ঘাড় ধরে বিদায় করে দিতাম।
মন্ত্রী: জাঁহাপনা ওই কথা বলবেন না। নিজের যোগ্যতা বলে মন্ত্রীর চাকরি পেয়েছি, আর সেই যোগ্যতা বলেই চাকরিতে বহাল আছি।
রাজা: হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার মত অকর্মণ্য পৃথিবীতে আর এক জন আছে কি-না, সন্দেহ। পার তো শুধু একটা কাজ করতে---আমাকে ব্ল্যাক-মেল করতে।
মন্ত্রী: আমাকে আর ক্ষেপাবেন না। মাথা থেকে ধোঁয়া এখনই বের করিয়ে দিবেন না। বেশী ঝামেলা করলে আমি কিন্তু এখনই যেয়ে রাজ রাণীর কাছে আপনার ফষ্টি নষ্টির সব ঘটনা ফাঁস করে আসবো।
রাজা: থাক থাক ওই মহৎ কাজটা করার দরকার নাই। তবে তিন দিন সময় বেঁধে দিলাম। এর মধ্যে আবিষ্কার করবে জনগণের মেরুদণ্ড কিভাবে বের করে ফেলা যায়। ওরা যাতে আর কখনও মাথা উঁচু করতে না পারে, আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারে।
মন্ত্রী: সময় বেঁধে দেওয়ার দরকার নাই। আপনার সমস্যার সমাধান আমার মাথায় এর মধ্যে চলে আসতে শুরু করেছে।
রাজা: তোমার মাথা থেকে সমাধান......আমাকে হাসালে। হা হা হা।
মন্ত্রী: এই দেশের মানুষ, মেরুদণ্ড নিয়ে জন্ম নিলেও, তাদের বয়স যত বাড়তে থাকে; মেরুদণ্ড তত গলতে থাকে। এই ধরেন চাকরিতে ঢুকতে ঢুকতে ৮০% গলে যায়, আর চাকরি টিকানোর জন্যে বাকিটাও গলিয়ে ফেলে। এই যেমন, আপনার চাকরি করতে করতে আমার মেরুদণ্ড গলে গেছে সেই কবে! হি হি হি !!
রাজা: কি আবোল তাবোল বকছো ...।
মন্ত্রী: জী জনাব......আপনার রাজত্বে এখন সবারই একই অবস্থা। মেরুদণ্ড গলা আরম্ভ হয় সেই ছোট বেলা থেকেই। পড়ালেখা না করে টিচারের পেছনে ঘুরে পরীক্ষার প্রশ্নের জন্যে আর চাকরিতে ঢোকার জন্যে দেয় এক বস্তা ঘুষ। তার পরে চাকরি টিকানোর জন্যে ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার মোসাহেবি করে মেরুদণ্ড গলিয়ে একেবারে ফ্যানা ফ্যানা করে ফেলে। নিজের সুস্থ জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে একেবারে গবেটে পরিণত হয়। তবে সব ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম কম্পিটিশনে পৃথিবীর সবাইকে টেক্কা দিয়ে দেয়। রাজা মশাই এইবার আপনিই বলেন দেশের মানুষদের মেরুদণ্ড বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট আছে?
রাজা: কি যা তা বলছো......সব জনগণ কি আর পড়ালেখা করে, তোমার মতো মন্ত্রীর চাকরি করে?
মন্ত্রী: সেটা সঠিক বলেছেন জাহাঁপনা। কিন্তু যেই চমৎকার ব্যবস্থা করা আছে, পড়ালেখা না করেও এরা মেরুদণ্ড হারাচ্ছে। অর্থের লোভে বদমায়েশ হচ্ছে। ভেজাল করতে, অন্যায় করতে, অপরাধ করতে বিন্দুমাত্র লজ্জা পর্যন্ত পাচ্ছে না। কিন্তু বিবেক দংশন ঠিকই হচ্ছে, মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছে। জাঁহাপনা এর পরেও যদি বলা হয় ওদের মেরুদণ্ড আছে, তা হলে মেরুদণ্ডকে বড় ধরণের অপমান করা হবে। সার্জারি করে ওদের পিঠের থেকে মেরুদণ্ড বের করলে, দুধে ময়লা পানি মেশানো ঘোল পাওয়া যাবে। আবার কিছু উচ্চ পদের ব্যক্তিদের পিঠ থেকে ঘোড়ার মূত্রও বের হয়ে আসতে পারে।
ডিসেম্বর ২৪, ২০১২
কাজী হাসান
প্রবাসী লেখকঃ quazih@yahoo.com