ফেসবুকের ছবি

নুপুরকে দিনের একটা সময় ফেসবুকে কাটাতেই হয়। কিছুটা নেশা, কিছুটা ভালালাগা। চেনা আর অচেনা বন্ধুদের মন্তব্য পড়ে,তাদের ছবি দেখে কখন যে ঘন্টার কাটা তার পরের ঘরে চলে যায়, সে বুঝতে পারে না। অনেক দিন ঘড়ির কাটাটা হয়তো আরো কয়েক ঘর বেশীও এগিয়ে যায়।

রাতে স্বামী যখন ঘুমিয়েছেন, নুপুর তখন নিজেকে নিজে ঘোষনা দেয়, এইটা তার নিজের সময়। সারা দিনের কর্ম কান্ড যখন থেমে আসে, তার মনে হয় দিনের মত দায়িত্ব শেষ। এখন তার অধিকার নিজেকে কিছু দেওয়ার।

এই নিজের সময়টাকে, নুপুর দেয় ফেস বুককে। স্বামী তাকে কয়েক বার ডেকে ঘুমিয়ে পরেন। প্রথম দিকে স্বামী মহাশয় বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কি আছে এই ফেসবুকে। বেশ কয়েক বার তিনি নূপুরের পেছনে দাড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন আসলে বাপারটা কি। খুবই অর্থহীন মনে হল নুপুরের অন্যদের স্ট্যাটাস পড়া, মন্তব্য দেখা, লেখা আর ছবি দেখার বাতিকে।

কিন্তু রাহমান সালেকিন এ নিয়ে প্রতিবাদ করেননি। নুপুরের ফেস বুকের আগ্রহে যে অন্য কোন কিছুতে কমতি পড়েছে, তা তিনি বের করতে পারলেন না। নুপুর সংসার আর স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করছে নিখুঁত ভাবে। সাথে সাথে স্বামীর প্রয়োজনও মিটিয়ে আসছে একজন দক্ষ খোলোয়াড়ের মত।

স্বামী যখন সুখী আর ক্লান্ত, নুপুর কানের কাছে মুখ দিয়ে বলে, তুমি ঘুমাও, আমি ফেসবুক দেখে আসি। রাহমান সালেকিনের আর তখন নূপুরকে না বলতে ইছে করে না। তার মনে হয় এক সময়ের চঞ্চল, উচ্ছ্বল মেয়েতো আজ স্ত্রী, মা। ফেস বুকে যদি কিছুটা সময় কাটাতে চায়, তা কাটাক না।                 

নুপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চেয়ে বড় যে ডিগ্রি, তাই নিয়েছিল আজ থেকে বিশ বছর আগে। সম্ভাবনা ছিল অনেক। বাবার মৃত্যু, মাস্টার্স পরীক্ষা আর বিয়ে হয়ে গেল খুব অল্প সময়ের মধ্যে। রাহমান সালেকিনের বয়স নুপুরের থেকে বছর দশেক বেশী হলেও, মনের উত্তেজনার কখনোই ঘাটতি ছিল না। কক্সবাজার, কাঠমুন্ডু আর ব্যাংকককে নূপুরকে নিয়ে গিয়ে ছিলেন হানিমুনে। ব্যবসায়ী স্বামী, স্ত্রীর কোনো ব্যাপারেই কার্পন্য নেই। প্রথমে নুপুরের কিছু অস্থিরতা ছিল। মনে পড়তো মোহনের সাথে স্বপ্ন দেখার কথা। কিন্তু সময়ের সাথে নূপুর মোহনকে অতিক্রম করতে পেরেছে। এখন সে আর তাকে ভাবে না, অনুভব করে না।

মোহনের সাথে নূপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয়। প্রানবন্ত মোহন তাকে সহজেই জয় করেছিল। প্রেম হয়ে গেল ঝড়ের গতিতে, পরিচয়ের এক মাসের মধ্যেই। এর পরে মোহের মধ্যে কাটল বিশবিদ্যালয়ের জীবন। তারা স্বপ্ন দেখতে থাকলো চাকরী পাওয়ার, সংসার করার। কিন্তু প্রকৃতির পরিকল্পনাটা ছিল অন্য রকম।

নুপুর ফেসবুকে স্ট্যাটাস, মন্তব্য দেখলেও, তার মুল আকর্ষন ছিল বন্ধুদের ছবি দেখা। সেই ছোট বেলা থেকেই তার স্বভাব ছিল মানুষের চেহারা দেখে বলে দেওয়া মানুষটার ব্যক্তিত্ব আর ভিতরকার কথা। এক সময়তো সে মুখের উপড়েই বলে দিত হাড়ির খবর।

তিন দিন মামার বাড়ী থেকে ঘরে এসে বাবার মুখ দেখে তার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। কিন্তু বাবা তার নিয়মিত সবই করে যাচ্ছিলেন।পঁচিশ বছর এক সাথে বসবানকারিণী মা কিছুই আঁচ করতে পারেন নি। নূপুর যখন মাকে জিজ্ঞাসা করল, বাবার কি হয়েছে। মা উত্তর দিলেন, কেন? পরে জানা গেল বাবা চাকুরী থেকে বরখাস্ত হয়েছেন নূপুর যেই দিন মামা বাড়ী যায় সেই দিনই। মা যাতে কষ্ট না পায় সে জন্য পাকা অভিনেতার ভূমিকায় ছিলেন বাবা।

একবার মায়ের বিয়ের সোনার চুড়ি দুটো হারিয়ে গেল। সব সন্দেহ যেয়ে পড়ল কাজের মেয়ের উপর। সে কাজ আরম্ভ করেছিল ঘটনার মাত্র দু-সপ্তাহের আগে। মা শুধু মাত্র মনে করতে পারেন গোসলের আগে তিনি চুড়ি খুলে বাথরুমে রেখেছিলেন। এর পরে কাজের মেয়েটি বাথরুম পরিস্কার করতে যায়। মা আর সবার বদ্ধমূল ধারনা হয় মেয়েটিই এই কাজ করেছে। কিন্তু নূপুর স্কুল থেকে বাসায় এসে সবার মুখ দেখে বলল, এই কাজ যে করেছে সে কাজের মেয়েটি না। কাজটি করেছে তারই সহোদর ভাই রতন। তখন নুপুরের বয়স ১১ আর ভাইয়ের বয়স ১৬।

বড় মামা বলতেন আমাদের নুপুর ফেস রিডার। মুখ দেখে সে নাড়ীর খবর বের করে দেয়। কথাটা এক সময় ছড়িয়ে পড়ে আত্মীয় স্বজন আর পাড়া-পড়শীদের মধ্যে। বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই ছিল তা একটা রসিকতার ব্যাপার। কিন্তু নুপুর তার এই ক্ষমতাটাকে লালন করে এসেছে খুবই যত্নে ।

কিন্তু আরো একটা আশ্চর্যের ব্যাপার আছে। নূপুর তার এই ক্ষমতা কিছু মানুষের উপর ব্যবহার করতে পারে না। আজ পর্যন্ত এ ধরনের মানুষের সংখা মাত্র দুই। মোহন আর রাহমান সালেকীন।

এমন ক্ষমতায় অধিকারী নুপুর যখন ফেস বুকের পাতায় পাতায় ঘুড়বে, মানুষের মুখের ছবি তাকে সব চেয়ে বেশী আকৃষ্ট করবে, তাই তো স্বাভাবিক। এর মধ্যে নুপুর আরো আবিষ্কার করলো, সে চেহারার সাথে সাথে মানুষের শরীরের ভাষাও বুঝতে পারে। শরীরের ভঙ্গি তাকে বলে দেয় ভিতরকার সব কথা। মামা থাকলে হয়তো বলতেন, নুপুর দেখি বডি রিডারও।

কি ভীষন অবাক কান্ড। নীরব ছবি আর তাদের চরিত্রগুলো নুপুরের সাথে সরব হয়ে যায়। তারা অবলীলায় নুপুরকে বলতে থাকে তাদের মনের সব না বলা কথা। তার মনে হয়, প্রকৃতি তাকে দায়িত্ব দিয়েছে এদের না বলা কথাগুলো শোনার।

এই দায়িত্ব, আর অন্য সব দায়িত্বের পাশাপাশি নূপুর পালন করে যাচ্ছে বেশ নির্বিগ্নে। ফেস বুকের বন্ধুদের সংখ্যা তার প্রায় শ-দেড়েক। প্রতিটা বন্ধুর চেহারা আর শরীরের ভাষা তার মুখস্থ। কিন্তু কাউকেই সে বলে না এই ছবিগুলো তাকে কি বলছে। নুপুর মাঝে মাঝে ভাবে, ছবি গুলো যে তাকে কি বলছে, তা সে জানিয়ে দেবে ছবি গুলো মালিকদের। কিন্তু পরের মুহূর্তই তার মন সাড়া দেয় না । আজ তিন বছর কিংবা তার বেশী সময় হয়ে গেল নুপুরের এই জগতের সাথে।

ছোট বেলার এক বন্ধু রত্না। একই বয়সের আর একই পাড়ার। ভীষন সখ্যতা ছিল এক সময়ে। বিয়ের পরে রত্না চলে যায় কানাডায়। তার পরে বহুদিন কোনো যোগাযোগ ছিল না। নুপুর ফেস বুকে একদিন তাকে খুঁজে পায়. তার পর থেকেই নিয়মিত যোগযোগ।

রত্নার প্রফাইল ছবি হলো হাস্যোজ্জল রত্না আর তার স্বামী। পাশাপাশি দুজনে, রত্না বসে, স্বামী পাশে দাড়িয়ে। নুপুর সাথে সাথেই বুঝে ফেলে তাদের কাহিনী। রত্নাও দুঃখ করে স্বীকার করে তার অসহনীয় দাম্পত্য জীবনের ইতিকথা ।

রত্না প্রবাসে এসেই জানতে পারে স্বামীর শ্বেতাঙ্গিনি বান্ধবীর কথা। স্বামী ভদ্রলোক দু-জনের সাথেই সম্পর্ক রাখতে চান। যুক্তি দিলেন, এই দেশে এটা কোনো ব্যাপার না। রত্না এটা কখনো মেনে নেয় নি। তার পর থেকে শুধু তাদের একই ছাদের নীচে বসবাস। যদিওবা এর মাঝে রত্না দু সন্তানের মা হয়েছে। এই বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে সে যাপন করছে তার জীবন। নূপুরের মতো, দিনের একটা সময় সেও কাটায় ফেস বুকে। বর্তমানকে ভুলে গিয়ে মনটা তার তখন ডানা মেলে কোনো এক আকাশে।

নুপুর রত্নার ফেস বুকের পাতা দেখছিল। তার বন্ধুদের ছবি দেখতে দেখতে একটা ছবি তার খুব পরিচিত মনে হলো। এ যে তার ছোট বেলার আরেক বন্ধু ঝর্ণা। ক্লাস থ্রী আর ফোরে তারা এক সাথে পড়েছে নজরুল বিদ্যালয়ে। পরে সে চলে যায় অন্য কোনো এক স্কুলে। তার বাবার নতুন চাকরী হয়েছিল শহরের আরেক প্রান্তে। নুপুর বলেই সম্ভব হয়েছিল প্রায় তিরিশ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া কোনো এক বন্ধুকে চিনতে পারা।

ঝর্ণা নুপুরের ফেস বুকের বন্ধু হয়ে যায়। কিন্তু তাদের ছোট বেলার বন্ধুত্বের কথা ঝর্ণার বেশী মনে করতে পারে না। শুধু মনে করতে পারে এক সময় সেও একই স্কুলে যেত। তিরিশ বছর আগে ফেলে আসা কিছুটা সময় তাকে আকর্ষণ করে না। ঝর্ণা নুপুরের আরো না দেখা ফেস বুকের বন্ধুদের মত এক জন হয়ে থাকে।

কিন্তু গত তিন মাস হলো নুপুরের বেশির ভাগ সময় কাটছে ঝর্ণার ফেস বুকের ছবি দেখে। সে তো কত মানুষের ছবি না এতদিন ধরে দেখে এসেছে. ছবিগুলোর সব কথা শুনেছে। ঝর্ণার কিছু ছবি নুপুরের সাথে শুধু কথা বলছে না, তাকেও বাধ্য করছে কথা বলতে।

ছবির মানুষটা ঝর্ণার স্বামী। বয়স দু জনের কাছাকাছি। সহজ, সরল, সাবলীল দাড়ানোর ভঙ্গী। তার মুখ, তার চোখ ঝল মল করছে। অনবরত বলেই যাচ্ছে, আমার কাছে ভালবাসা আছে। আমার ভালবাসা পৃথিবীর যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ভালবাসা। তুমি যদি এ ভাষা বুঝো, তা হলে তোমাকে উত্তর দিতেই হবে।

নুপুর চিন্তা করতে চায় এই লোকের ছবি যে ভাষা পড়ছে তা ভুল। কিন্তু জীবনে কখনো কারো মুখ আর তার ছবি সে ভুল পড়েনি। কেন এই ছবির তাকে শুধুই কথা বলছে না, তাকে কথা বলার জন্যে ঠেলেও দিচ্ছে।

নুপুরের মাথায় এক বার আসলো সে আর ফেস বুকে যাবে না। কিন্ত না; সেটা সম্ভব হলো ন। যন্ত্রের মত তাকে ফেস বুকে যেতেই হচ্ছে। আবার ঠিক করলো ওই লোকের ছবি সে দেখবে না। তাও হলো না, কিভাবে যেন ওই লোকের ছবি নুপুরের পুরোটা সময় কেড়ে নিচ্ছে।

এর মধ্যে নুপুর আরেকটা কাজ করলো. প্রথমে ঝর্ণা আর ওই লোকের ছবিটা নিজের কম্পিউটারে সেভ করলো। তার পরে দু-জনের ছবি থেকে ওই লোকের ছবিটা আলাদা করে নিল। দেখার জন্যে শুধু ওই লোকের ছবি তাকে কথা বলাতে পারে কি না।

পারলো, আরো বেশি করেই পারল. ওই লোকের ছবিটা এখন তার পরম বন্ধু। নূপুর ওই লোককে বলতে থাকলো তার জীবনের সব কথা। ভালবাসা, দুঃখ আর এমনকি একান্ত ঘটনাগুলো পর্যন্ত।

নুপুর ভাবে এইটা কি হচ্ছে। সে একজনের স্ত্রী আর ওই লোক তার পরিচিত আর এক মেয়ের স্বামী। ওই লোকের অজান্তে তাকে নিজের সব কথা বলে দেয়াটা কি ঠিক হচ্ছে।

মাঝে নুপুরের ভীষন জেদ হলো। সে ছবির লোক না, বাস্তবের ওই লোকের সাথে যোগাযোগ করবে। জানবে কেন তার ছবি দেখলে আর সে স্থির থাকতে পারে না। নুপুর ইদানিং অন্যদের সাথে কম কথা বলে। কিন্তু ওই লোকের ছবি তাকে অনর্গল কথা বলাচ্ছে। এই কথাগুলো একেবারে বিশেষ। গলার থেকে কোনো শব্দ নাই, তার পরেও কথোপকথন চলতে থাকে। এমন দিনও গেছে, যেদিন নুপুর তার একই কথা দশবার বলেছে। ওই লোকের কি কথা শোনার কোনো ক্লান্তি নাই।?

নুপুর অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করলো সে ঝর্ণার ফেস বুকে মন্তব্য লিখবে, ঝর্ণা আর ওই লোকের ছবির নীচে। ওই লোকের কানে হয় তো যাবে তার মন্তব্য লেখার কথা। এতে যদি সে উৎসাহী হয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে, তা হলে তো খুব ভালো। আর যদি না করে, তার থেকে আর বেশী কিছু করা সম্ভব হবে না। সংস্কারের দেওয়ালে এর থেকে বেশী ধাক্কা দেয়া যাবে না।

একটা মন্তব্য লেখা যে এতো কঠিন হবে, নুপুরের মাথায় তা আগে কখনো আসে নি। চিন্তাগুলো সব এলোমেলো হতে থাকলো। গলাটা শুকিয়ে আসলো, হাত দুটো কাপতে লাগলো। তার পরে সে ঘামতে লাগলো। তাড়াতাড়ি কম্পিউটারের সামনে থেকে উঠে গেল। স্বামী রাহমান সালেকীন যদি দেখে ফেলেন, যদি জানতে চান নুপুর এমন করছে কেন? তা হলে সে কি উত্তর দিবে। কিন্তু সে সম্ভাবনা নাই। তিনি এখন অঘোর ঘুমে।

পর পর তিন দিন চেষ্টা করেও নুপুর পারলো না কাজটা করতে। চতুর্থ দিন বিছানা থেকে উঠেই পণ করলো আজ তাকে পারতেই হবে। আশ্চর্য, নুপুর আজ সফল হলো। সত্যি সত্যিই মন্তব্যটা লিখে ফেললো। ছবির নিচে নুপুর লিখল " প্রিয় ঝর্ণা, তোমার ছবিই বলে দিচ্ছে তুমি স্বামী সোহাগিনী পৃথিবীর মহা সুখী মানুষদে একজন " তার পর নুপুর আরো লিখলো "আমি তোমার হয়ে তোমার স্বামীকে বলতে চাই--তোমার চেহারা আর শরীর বলে দিচ্ছে, এ ভালবাসায় কোনো শঠতা নাই । তোমার মুখ আর চোখে ভালবাসার বন্যা. বুকের সব কথা, কষ্ট আর আনন্দকে বের করে আনে। "

এর পরে পুরো এক সপ্তাহ নুপুর ফেস বুকে গেল না। না সে আর কারো ছবির ভাষা পড়বে না। তাদের কথা শুনতে চায় না। কিন্তু মনে যে একটা ক্ষীণ আশা ছিল। ওই লোক যদি তাকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠায়।

প্রথমেই দেখল কেউ তাকে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে কি না। হ্যা সাতটা অনুরোধ। কিন্তু যারটা আশা করছিল, সে এর মধ্যে নাই। সম্ভবত নুপুর তার ফেস বুকের জীবনের প্রথম বারের মত সাতটা অনুরোধই নাকচ করে দিল।

নুপুর ভাবছিল হয়তো ওই লোক খুব ব্যস্ত। তার সময় হয়ে উঠেনি ফেস বুকে আসার। ওই লোকের নাম বের করে, তারই ফেস বুকে নূপুর গেল। একবার ঝর্ণা বলেছিল চ্যাট করার সময়, সেই তার স্বামীর ফেস বুকের একাউন্ট দিন কয়েক আগে করে দিয়েছিল। নুপুরের সে জন্যে মনে হয়েছিল--- ঝর্ণার কথা শুনে ওই লোক যদি বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠায়।

ওই লোকের ফেস বুকের পাতায় যেয়েই বুঝলো, একাউন্ট বানানের পরে ভদ্রলোক আর কখনো হয়ত ফেস বুকে আসেন নি। ওই লোক ফেস বুকের খবর রাখেন বলে মনে হয় না। তার কাছ থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাওয়ার আশা করাটা বিরাট ভুল। আবার নূপুর ভাবলো সেই তো কাজটা করতে পারে। বন্ধুত্বের অনুরোধ নিজেই পাঠাতে পারে। কিন্তু পরের মুহুর্তে ভাবলো, যে লোক ফেস বুকেই আসে না, সে কি করে ফেস বুকের বন্ধু হবে।

নুপুর ওই লোকের ছবি আর পুরোটা সময় ধরে দেখে না। কিন্তু কিছুটা সময় তাকে অবশ্যই দিতে হয় এই কাজে। দিনের সবগুলো অনুভূতি অকপটে ওই লোককে বলে। সারা দিনের যা যা ক্ষয় হয়েছিল, তার বেশিরভাগই পুনরুদ্ধার হয়ে যায়।

বন্ধুত্বের অনুরোধ নুপুর আর আশা করে না ওই লোকের কাছ থেকে। প্রকৃতির কোনো এক অজানা নিয়মে সে যেমন একের পর এক ছবির কথা শুনে চলেছে, ওই লোকও হয়তো তার মতো মানুষদের কথা বলাচ্ছে, শুনছে। একটা আরেকটাকে শান্ত করছে, স্থির করছে, ভারসাম্যে রাখছে। পৃথিবীকে নিজের নিয়মে রাখছে।

 

 

 

 

person using laptop browsing facebook application