সুরা আল ফাতেহা

পিঁপড়ার ডিবি দেখেন নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কিন্তু খুব কঠিন। অগণিত পিঁপড়া তাদের নিজের নিজের কাজ কর্ম করে চলেছে। কেউ ডিবির থেকে বের হচ্ছে, কেউ ঢুকছে। অন্যরা ছোট ছোট পা ফেলে অনেক দূরে চলে গেছে খাবারের খোঁজে। তাদের মধ্যে কি কেউ অসুস্থ, কেউ কি হতাশ, কেউ কি বা আরও অন্য কোনো সমস্যায় ভুগছে; এ ব্যাপারে কি আমাদের বিন্দু পাত্র মাথা ব্যথা আছে? অনেকের কাছে এই প্রশ্ন করাটাই অবান্তর। মানুষের কি সময় আছে এই সব নগণ্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর? কিংবা মানুষ কি সামান্যতম কেয়ার করে পিঁপড়ার প্রয়োজন, দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ আছে কি নেই??

মহান আল্লাহ সুবহান আ তা আলা’র বিশাল সৃষ্টিতে আছে এই বিশাল পৃথিবী, সাগর-মহাসাগর, গ্রহ, নক্ষত্র, তারা এবং আরও কত কি। আরও আছে লক্ষ্-কোটি জীব আর প্রাণী। শুধুমাত্র মানুষের সংখ্যা আজ পৃথিবীতে ৭ বিলিওন ছাড়িয়ে গেছে। তা ছাড়া কত অসংখ্য মানুষ-ই না এ পর্যন্ত, মৃত্যু বরণ করেছেন! সব মিলিয়ে আমাদের পক্ষে জীবিত-মৃত মানুষের সঠিক হিসেব বের করা একেবারে অসম্ভব একটা কাজ। আমাদের বেশীর ভাগই যেখানে পিঁপড়া সহ অন্যান্য প্রাণীর ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোর ব্যাপারে তেমন কোন উৎসাহ অনুভব করে না; সেখানে আমাদের সৃষ্টি কর্তা রাব্বুল আল আমিন আমাদেরকে প্রত্যেকের প্রতিটা ব্যাপারে পূর্ণ উৎসাহ দিয়ে তদারকি করছেন। সর্বোপরি আমাদেরকে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগের উপায় দিয়ে রেখেছেন। আমাদের কাছে পিঁপড়া সামান্য কীট হতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তা আলার কাছে আমরা একেবারেই ক্ষুদ্র না। আমারা হচ্ছি তার প্রিয় বান্দা আশরাফুল মখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আলহামদুল্লি আল্লাহ।

মহান আল্লাহ তাঁর সাথে সরাসরি যোগাযোগের যেই সুন্দর মাধ্যমটা দিয়ে রেখেছেন, তার নাম হচ্ছে সুরা ফাতেহা। ছোট একটা অঙ্ক দিয়ে বিষয়টা আরেকটু বলার চেষ্টা করব, ইনশা আল্লাহ। ধারণা করা হয় পৃথিবীর বর্তমান মুসলমান জনসংখ্যা বিলিওন ছাড়িয়ে গেছে। দৈনিক শুধুমাত্র ফরজ নামাজের হিসেব করলে সতের রাকাত হয়। প্রতি রাকাতে এক বার করে সুরা ফাতেহা পড়লে, এক বিলিওন মুসলমান দিনে সুরাটা পড়ছে ১৭ বিলিওন বার। সমগ্র দুনিয়ায় এই সুরার সাত ছত্র যতবার প্রতিদিন পাঠ করা হচ্ছে; সেটা নিঃসন্দেহে সর্বাধিক।

কোরআন শরিফের ১১৪ টা সুরার মধ্যে প্রথম সুরাই হলো আল ফাতেহা। সুরাটার সুবিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যে বেশ কিছু নামকরণ করা হয়েছে, যা তাঁর মাহাত্ম্য স্পষ্ট করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলোঃ আল ফাতেহা (উদ্বোধন), উম্ম আল কোরআন (কোরআনের মাতা), উম্ম আল কিতাব (পুস্তকের মাতা), সাবুল মাথানী (সর্বাধিক পঠিত সাত ছত্র), আল হামদ (আল্লাহ’র প্রশংসা), আস সালাহ (নামাজ), আসাস আল কোরান (কোরআনের ভিত) । প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, সুরা ফাতেহার গুরুত্ব কত উপরে। আল্লাহ থেকে আসা সর্ব শেষ আর সর্ব সেরা গ্রন্থের মাতা হওয়ার তাৎপর্য আমাদের সবারই বুঝতে চেষ্টা করা উচিত।

এখন সুরা আল ফাতেহার বাংলা অর্থ আরেকবার দেখে নেই:

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ’র নামে শুরু

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা ‘আলার জন্য।

যিনি পরম করুণাময় ও মহান দয়ালু

যিনি বিচার দিনের মালিক

আমরা তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি

তুমি আমাদের সরল ও সহজ পথ দেখাও

তুমি অনুগ্রহ দান করেছো

তাদের পথ নয়, ( যারা) অভিশপ্ত এবং পথহারা হয়েছে।

আমরা সুরা ফাতেহা পাঠ করলে, পরম করুণাময় আল্লাহ তা আলা, নিজে তাঁর জবাব দেন। সহি মুসলিম শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী আবু হুরায়রাহ (র:) জানিয়েছেন, নবী করিম (দঃ) বলেছেন, আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ইবাদত নিজের এবং বান্দার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। বাংলা অনুবাদ করলে মহান আল্লাহ তা আলার সাথে বান্দার কথোপকথন এ রকম দাঁড়াতে পারে:

**বান্দা: সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা ‘আলার জন্য।

আল্লাহ: আমার বান্দা আমাকে প্রশংসিত করেছে।

** বান্দা: যিনি পরম করুণাময় ও মহান দয়ালু

আল্লাহ: আমার বান্দা আমাকে গর্বিত করেছে।

** বান্দা: যিনি বিচার দিনের মালিক

আল্লাহ: আমার বান্দা আমাকে মহিমান্বিত করেছে।

**বান্দা: আমরা তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি

আল্লাহ: এবাদত আমার এবং আমার বান্দার মধ্যে। আমার বান্দা আমার কাছে যা চাচ্ছে, তা মঞ্জুর হবে।

**বান্দা: তুমি আমাদের সরল ও সহজ পথ দেখাও

আল্লাহ: এইটা আমার বান্দার জন্যে, এবং আমার বান্দা যা চাচ্ছে, তা সে পাবে।

**বান্দা: তুমি অনুগ্রহ দান করেছো। তাদের পথ নয়, (যারা) অভিশপ্ত এবং পথহারা হয়েছে।

আল্লাহ: এইটা আমার বান্দার জন্যে, এবং আমার বান্দা যা চাচ্ছে, তা সে পাবে।

সুরা ফাতেহাকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা যায়। প্রথম ৪টি আয়াতে শুধুমাত্র স্রষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে আল্লাহ্‌র কাছে এবাদত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করা হয়েছে (আয়াত ৫) । তৃতীয় অংশে হেদায়েত চাওয়া হয়েছে। আমরা তো এখন দেখতেই পারছি, মহান আল্লাহ তা আল্লাহ, সুরা ফাতেহার মাধ্যমে, তাঁর প্রতি আমাদের প্রশংসা, ইবাদত, হেদায়েত ও সাহায্যের আবেদনের উত্তর দিয়েছেন। আর আমাদের জন্যে কি সুন্দর-ই না এই নেয়ামত; প্রতি রাকাত নামাজে আমাদের সুরা ফাতেহা পাঠ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

প্রথমে পিঁপড়ার উদাহরণ দিয়ে এই লেখা আরম্ভ করেছিলাম। আমাদের পিঁপড়া নিয়ে তেমন কোন উৎসাহ না হলেও, মহান আল্লাহ তা আল্লাহ তা আলা তাঁর অগণিত সৃষ্টির ভিতরে আমাদের অবর্ণনীয় সম্মান দিয়েছেন। তিনি স্বয়ং আমাদের সুরা ফাতেহা পাঠকালীন সময়ে আমাদের সাথে কথোপকথন করেন। আলহামদুল্লি আল্লাহ, আলহামদুল্লি আল্লাহ। আমাদের সাথে মহান সৃষ্টি কর্তার যোগাযোগ একেবারে সরাসরি। আমরা যে কোন ধরণের সাহায্য দ্বিধা হীনভাবে তাঁর কাছে চাইতে পারি। কারণ তিনিই একমাত্র এবং একা আমাদের সব প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। আমাদের জীবন ও জীবিকা তাঁর উপরেই নির্ভরশীল।

আল্লাহ আমাদের সুরা ফাতেহা এবং সমগ্র কোরান শরিফ বুঝা ও সেই হিসেবে চলার ক্ষমতা দান করুন। আমিন।

কাজী হাসান

লেখক: quazih@yahoo.com