ভূতের ঠিকানা
আপনি কি ভূত দেখেছেন? দেখেন নি। বিশ্বাস করেন? না তাও করেন না। কিন্তু ঘুট ঘুটে অন্ধকারে একা কোথাও যেতে কি গা ছম ছম করে উঠে? যদি করে, তা হলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে ভয় আছে। এই ভয় ব্যাপারটা কোথা থেকে এলো? সম্ভবত ছোট বেলা থেকেই সেটা আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তা হলে প্রশ্ন হতে পারে, ভয়ের সংজ্ঞা কি? ক্ষতি হওয়ার আশংকাটাই ভয়। আবার যেই ভয়ের সহজ-সরল কোনো ব্যাখ্যা নাই, তাকে ভুতের ভয় বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখে এমেরিকায় হালোয়িন দিবস পালন করা হয়। দিবসটার কিছু প্রাচীন ও ধর্মীয় ইতিহাস থাকলেও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে এটা সামাজিক উৎসব হিসেবে পালন করা আরম্ভ হয়। সুযোগ সন্ধানী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা এই উদযাপনের মধ্যে মুনাফা করার সুযোগ খুঁজে পান। বর্তমানে হালোয়িন দিবস উপলক্ষে ৯ বিলিওন ডলারের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ক্রিসমাসের পরেই এর ব্যবসায়িক গুরুত্ব। হালোয়িন উৎসব এখন মোটামুটি আন্তর্জাতিক হওয়ার পথে। পৃথিবীর নানা দেশে এমেরিকার সাথে পাল্লা দিয়ে এই দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশও এতে পিছিয়ে নাই। তারাও ঘটা করে নানা ধরণের ভূত ও ভৌতিক আয়োজন করে নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক পরিবারের সক্রিয় সদস্য হিসেবে প্রমাণ করছে।
হালোয়িন এলেই আমার মাথার মধ্যে ভূত বিষয়ক চিন্তাগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এইবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। মাথার মধ্যে মেলা ভৌতিক চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে। তবে ঠিক করেছি, ভূতের গল্প লেখার পরিবর্তে ভূতের আসল রূপ নিয়ে দু চারটে কথা বলবো। আমি অবাক হয়েছি জেনে, যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার অর্ধেক ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। বিলেতি ইংরেজরা মানে যুক্তরাজ্যের মানুষদের মধ্যে এই ধরণের বিশ্বাসীদের হারটা আরও বেশী। শিক্ষিত ও উন্নত দেশের যদি এই দশা হয়, তা বলে আমরা ধরে নিতে পারি অনুন্নত দেশগুলোতে ভূত বিশ্বাসীর সংখ্যা আরও অনেক বেশী। তবে আমার ধারণা, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রেকর্ডের আশে পাশে কেউ ভিড়তে পারবে না। এখানে শুধু মানুষ ভূতে বিশ্বাস করে বসে নাই, কাজে-কর্মে এবং সাহিত্যে ভূত নিয়ে এসেছে। সম্ভবত বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ভূতের নামের রাস্তার নাম করণ পর্যন্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে না হয় একটু পরে আসি।
একবার এক বন্ধু অন্য বন্ধুর কাছে অভিযোগ করলো, “রাতের বেলা ভূত রা সব আমার বাড়ির চারিদিকে বাঁশের বেড়ার উপর বসে ভয় দেখায়।” বিজ্ঞ বন্ধু সমাধান দিলো, “বাঁশের মাথাগুলো চোঙ্গা করে দিলেই হয়। তা হলে ভূত সেখানে বসতে পারবে না।” কিন্তু ভূত সমস্যার সমাধান কি এতই সহজ? প্রচলিত মতবাদটা হলো, অতৃপ্ত আত্মারা পরকালে যেতে না পেরে এই পৃথিবীতে জীবিত মানুষের আশে পাশে ভূত হয়ে বসবাস করে। মতবাদটা অনেক প্রাচীন হলেও বিজ্ঞান ভূতের অস্তিত্ব নাকচ করে দিয়েছে। অবশ্য ভূত বিশ্বাসীরা বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের একটা তত্ত্ব দিয়ে অন্যপক্ষকে কাবু করার চেষ্টা করে থাকে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী শক্তির সৃষ্টি কিংবা বিনাশ নাই; শুধু রূপান্তর আছে। তা হলে মানুষের আত্মা যদি একটা শক্তি হয়, মৃত্যুর পর এটা শরীর থেকে বের হয়ে গেলেও শেষ হয়ে যায় না। তাদের মতে আত্মা শরীর থেকে বের হয়ে ভূতে রূপান্তরিত হয়। চট্টগ্রামে শ্মশানের পাশ দিয়ে একটা পাহাড়ি ঢালু রাস্তা চলে গেছে। শোনা যায়, সেখানে মাঝ রাতের পরে গলা কাঁটা ভূত হেঁটে বেরায়। গাড়ি থামিয়ে ওরা সিগারেট চায়। এখানে প্রশ্ন হতে পারে, যদি গলাই না থাকে, তা হলে ওরা ধূমপান কবে করে কি করে? সিগারেট টানতে হলে মুখ, ঠোট, নাকের তো একান্তই দরকার। তা ছাড়া গলার আওয়াজই বা আসে কি করে।
১৯২১ সালে ডব্লিউ এইচ উইলমার একটা ভৌতিক বাড়ি নিয়ে অদ্ভুত ধরণের গল্প লিখেন। এক পরিবার বেশ পুরনো বাড়িতে বসবাস করা আরম্ভ করেছিল। রাত হলেই বাড়িতে তারা বিভিন্ন ধরণের ভৌতিক ঘটনার সম্মুখিন হতো। বিভিন্ন ধরণের শব্দ কানে আসতো। মনে হতো কিছু মানুষ ফিসফিস করে কথা বলে বাড়িত আসবাবপত্র নড়াচড়া করছে। শুধু তাই না কোনো এক শক্তি তাদেরকে বিছানায় আটকে রাখতো; চাইলেও তারা উঠতে পারতেন না। সাথে শরীরও অস্বাভাবিক ধরণের দুর্বল হয়ে পড়তো। তাদের স্থির বিশ্বাস হলো, বাড়িতেূত ভূত আছে। সেই কারণেই রাত হলে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। কিন্তু পরে আবিষ্কার হলো, বাড়ির পুরনো ফার্নেস ঠিক করে কাজ করছিল না। সেখান থেকে কার্বন মনো অক্সাইড নামের বিষাক্ত গন্ধহীন গ্যাস বের হয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করছিল। ফার্নেস মেরামত করা মাত্রই বাড়ির সব ভৌতিক সমস্যাগুলো চলে যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে শ্যাওলার (mold) কারণে মানুষের মনে অকারণ ভয় ও স্মৃতি ভ্রম হতে পারে। অনেকে বলেন, রাতে যেহেতু শব্দের পরিমাণ কমে যায়, তখন কিছু মানুষের কান অল্প কম্পনের (low frequency) শব্দও শুনতে পায়। সুস্থ মানুষের কান ২০-২০,০০০ Hz কম্পনের শব্দ শুনতে পায়। পশুরা আরও কম Hz বা কম্পনের শব্দ শুনতে পারে। নিম্ন কম্পনের শব্দ যারা শুনতে পারে, তাদের অবচেতন মনের ভিতর ভয়ের যে কাল্পনিক রুপ থাকে, সেটাই তারা দেখছে বলে ভেবে নেয়। বিষয়টাকে স্বপ্ন দেখার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বাস্তবে ঘটনা ঘটে নি, তারপরেও অবচেতন মন স্বপ্নের মাধ্যমে কিছু দৃশ্য দেখিয়ে দেয়।
বন্ধুদের আড্ডার আসরে কথা হচ্ছিল ভূত নিয়ে। সেখানে এক দল বিশ্বাস করে ভূত রা মানুষের পাশাপাশি বসবাস করছে। অন্য দলের দৃঢ় বিশ্বাস ভূতের পুরো ব্যাপারটা ভুয়া ও মন-গড়া। তারা বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব দেখিয়ে পুরো বিষয়টা উড়িয়ে দিলো। প্রথম দল কোনো শক্ত-পোক্ত যুক্তি না পেয়ে শেষে বলে বসলো, “ধর্মে জীনের কথা বলা হয়েছে। ওরাতো তো মানুষের উপর আছর করেই থাকে।” উত্তরে অন্য পক্ষ বুঝালো, “মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তারা যেহেতু জ্বীনের উপর কর্তৃত্ব করতে পারে না, তা হলে জ্বীনই বা কিভাবে মানুষের উপর আছর করবে?” তারা আরও বলে চলল, “কথিত আছর হওয়া সময়ে মস্তিষ্কের অব্যবহৃত কিছু অংশ সক্রিয় হয়ে উঠে। মস্তিষ্কের এই অংশের ক্ষমতা আছর হওয়া ব্যক্তিকে অস্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক শক্তি দেয়। সে জন্য সে সময়ে সে অন্য মানুষের গোপন কথা বলে দিতে পারে কিংবা পাঁচ জন মানুষকে ঠেলে ফেলে দিতে পারে।” বিখ্যাত জাদু শিল্পী হুডিনি প্রমাণ করেছিলেন, যারা দাবী করে যে তারা ভূতের সাথে কথা বলতে ও বশ করতে পারেন, তারা মানুষকে একেবারেই মিথা বুঝানোর চেষ্টা করেন।
ভূতে বিশ্বাস থাকুক কিংবা না থাকুক বেশীর ভাগ মানুষেরই অতি-প্রাকৃত (super natural) বিষয়গুলো উপর আগ্রহ দেখা যায়। প্রতি বছরই অতি-প্রাকৃত বিষয় নিয়ে লেখা গল্প, উপন্যাস, ছবিগুলো দারুণ ব্যবসা করে। পৃথিবীর এমন কোনো জায়গায় খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে ভূত নিয়ে অতি-প্রাকৃত গল্প প্রচলিত নাই। এমনকি এমেরিকার প্রেসিডেন্টের সরকারী বাস ভবন হোয়াইট হাউস নিয়ে আছে প্রচুর শরীর শিউরে দেবার মতো সব অশরীরী ভূতের গল্প। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন খুন হন ১৮৬৫ সালের এপ্রিল মাসে। মৃত্যুর পরও তাকে হোয়াইট হাউসে দেখা গেছে বলে শোনা যায়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রুজভেল্ট (১৯৩৩-১৯৪৫)। তার আমন্ত্রণে নেদারল্যান্ডের রাণী উইলিমিয়া এমেরিকার বেড়াতে আসেন। হোয়াইট হাউসে তার জন্যে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। একরাতে তিনি দরজায় কাউকে টোকা দিতে শুনেন। তিনি দরজা খুলে দেখেন আব্রাহাম লিঙ্কনের অবয়বের কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছেন। রাণী উইলিমিয়া সাথে সাথেই জ্ঞান হারান। মজার ব্যাপার হলো লিঙ্কন যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি নিজেও ভূত দেখার কথা বলেছিলেন। তার ছেলে উইলি ১৮৬২ সালে হোয়াইট হাউসে ১১ বছর বয়সে মারা যায়। উইলি না-কি প্রায়ই বাবার সাথে দেখা করতে আসতো। একবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় হোয়াইট হাউসের রোস গার্ডেন (Rose Garden) সরিয়ে নেয়ার। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে কর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে ফিরে আসে। রোস গার্ডেনের নির্মাতা মৃত প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি ডলি মেডিসন তাদেরকে ভয় দেখান। রোস গার্ডেন সরিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। দু শত বছরের পুরনো বাগান আজও দেশী-বিদেশী অতিথিদের বিমোহিত করে চলেছে।
ভূতকে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ভিলেনের চরিত্রে দেখা গেলেও আমরা কিন্তু ভালো ভূতেরও সন্ধান পাই। বাহামায় ভুতেরা মাছ তাড়িয়ে আনে যাতে জেলেদের মাছ ধরতে সুবিধা হয়। অস্ট্রেলিয়ার হাসপাতালে মার্থা নামের এক পেত্নী নার্স দেখা যায়। নতুন নার্সদের সাহায্যে করে মার্থা এ পর্যন্ত অনেক রুগীর প্রাণ বাঁচিয়েছে। ইংল্যান্ডের গ্লুকেসটেরশায়ারে (Gloucestershire) কেউ পথ হারিয়ে ফেললে স্থানীয় ভূতরা গাড়ি থামিয়ে বলে দেয় কিভাবে গেলে সঠিক জায়গায় পৌঁছান যাবে। বাংলা লোকগাথায় অবশ্য তেমন একটা ভালো ভূতের সন্ধান পাওয়া যায় না। এই ধারা ভাঙ্গা জন্য হয়তো বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, 'গুপী গাইন, বাঘা বাইন' ছায়াছবিতে দেখিয়েছেন, ভূতের রাজা গুপী-বাঘা কে তাদের সততা, সরলতা জন্য বর দিয়েছিলেন। ভূতের রাজা নিজে ভালো না হলে কি আর সততা ও সরলতার মাহাত্ম্য বুঝতেন?
বাংলায় একটা কথা আছে, ‘সর্ষে ভূত ’। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হলো সরিষা দানা। তার মধ্যেও না-কি ভূত ! কারো কারো মতে এক সময়ে গ্রাম বাংলায় ওঝারা সরিষা ব্যবহার করে ভূত তাড়াতেন। কোনো রুগীকে সারাতে ব্যর্থ হলে বলতেন, সর্ষে ভূত । তার মানে সর্ষে ভেজাল ছিল। বন্ধুরা, দেখলেন তো বাঙালিরা ভূত দের কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করে রেখেছে। তবে আমার নিজস্ব মত হলো, পৃথিবীর আর কোনো জাতি বাঙালিদের মতো ভূত নিয়ে এতো বেশী গবেষণা করে নি। বাংলা ভাষায় মহিলা ভূতের নাম দেয়া হয়েছে পেত্নী। আসুন এই বার আপনাদের কয়েক ধরণের বাংলাদেশের আদি ও উল্লেখযোগ্য ভূতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই:
• শাঁকচুন্নি: শাঁকচুন্নিরা সাধারণত ধনী বিবাহিত মহিলাদের ভেতর ভর করে। তারপর নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করে। লোকগাথা অনুসারে তাদের বসবাস আম গাছে।
• চোরাচুন্নি : এরা খুবই খারাপ ধরণের ভূত এবং মানুষের অনিষ্ট করে থাকে। সাধারণত কোন চোর মৃত্যুবরণ করলে চোরাচুন্নিতে পরিণত হয়। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয়। সুযোগ পেলেই বাড়িতে ঢুকে মানুষের ক্ষতি করে।
• মেছো ভূত : এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো ভূত সাধারণত পুকুর পাড়ে কিংবা খালের ধারে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এরা তার পিছু নেয়। সুযোগ-মত নির্জন বাঁশ ঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে কিংবা আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।
• দেও: এই ধরনের ভূত নদীতে বা খালে বসবাস করে। এরা লোকজনকে পানিতে ফেলে দিয়ে ডুবিয়ে মারে।
• নিশি: ভূত দের মধ্যে অন্যতম ভয়ংকর হলো নিশি। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বের হয়ে আর কখনো ফিরে আসে না। মনে করা হয়, ঘর ত্যাগীরাও নিশিতে পরিণত হয়। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে। লোককাহিনী অনুসারে নিশিরা কোন মানুষকে দুবারের বেশি ডাকতে পারে না। তাই তিনবার ডাক দেয়ার আগে রাতের বেলা ঘর থেকে বের হওয়াটা বিপজ্জনক।
• মামদো ভূত : হিন্দু বিশ্বাস মতে, এরা মুসলমান আত্মা; মারা যেয়ে ভূত হয়ে গেছে।
• গেছো ভূত : গেছো ভূত গাছে বসবাস করে।
• বেঘো ভূত : এরা হলো সেইসব মানুষের আত্মা যারা বাঘের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছে। সাধারণত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা শোনা যায়। এসব ভুতেরা জঙ্গলে মধু আহরণে জন্যে আসা গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এরা ভয় দেখানোর জন্য বাঘের মতো করে ডাকতে পারে।
• স্কন্ধকাটা/কন্ধকাটা/ কবন্ধ: এই ভূত দের মাথা নাই। এরা এমন লোকের আত্মা যাদের মৃত্যুর সময় কোনো দুর্ঘটনায় মাথা কেটে গেছে। এ শ্রেণীর ভূতেরা সব সময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায়। তারা অন্য মানুষকে আক্রমণ করে মেরে অনুগত ভূতে পরিণত করে এবং তাদেরও মাথা খোঁজার কাজে নিয়োগ করে।
• ডাইনী: ডাইনী কোন আত্মা বা ভূত না। বাংলা লোক সাহিত্যে বয়স্কা মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকে ডাইনি বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে হত্যা করে এবং তাদের হাড়, মাংস ও রক্ত চিবিয়ে খায়। এর জন্যে তারা ১০০ বছর বাঁচে।
• ঝেঁয়ো পেত্নী: এরা সাধারণত ঝাউগাছে লুকিয়ে রাখে। ভর-সন্ধ্যাবেলায় কেউ একা একা ঝাউ-বন বা জঙ্গল পেরুতে গেলে এই পেত্নীরা তাকে ধরে ঝাউয়ের মগডালে চড়িয়ে দেয়।
• ডাকিনী: ডাইনি বুড়িদের অনুগত শ্রেণির ভূত । এদের প্রিয় খাদ্য হলো পাতিহাঁস। পুকুর বা দিঘীর ধারে তাল বা নারিকেল গাছে বসবাস করে। রাতের বেলা এরা মেয়ে সেজে ঘুরে বেরায়।
আরও মেলা ধরণের ভূতের পরিচয় বাংলা সংস্কৃতিতে পাওয়া যায়। তবে ইন্টারনেট ঘেটে জেনেছি, ভূতের আবাস এখন শুধু গ্রাম বাংলায় সীমাবদ্ধ নাই। শোনা যায় ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, এয়ার পোর্ট রোড, অভিজাত বনানী এলাকায় নিয়মিতভাবে ভূত দেখা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের নয়নাভিরাম ফয়েজ লেকে এক বৃদ্ধা পেত্নীর উপদ্রপের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাই হোক, আপনি চাইলেই কিন্তু ভূত নিয়ে গবেষণা করে প্রচুর নাম-ডাক কামাতে পারেন। তবে শর্ত আছে একটা; ভূত দর্শনে একেবারেই ভীত হওয়া চলবে না। কারণটা হলো, দুর্বল বুঝতে পারলেই কিন্তু ভূত আপনার ঘাড় মটকে দিতে পারে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই জানেন ভূত দের সম্মানিত করার জন্যে রাজধানী ঢাকার নামী-দামী একটি রাস্তার নাম করণ করা হয়েছে, “ভূতের গলি”। তবে আমার সঠিক জানা নাই, যাদের সম্মানে এই রাস্তার নাম করণ করা হয়েছে, সেই ভূত রা সেখানে ব্যাপকহারে চলাচল করে কি-না।
তবে এতটুকু আমার জানা আছে, কিছু অর্থ ও ক্ষমতা-লোভী; মানুষ হয়েও বাংলা লোকগাথার ভূতের থেকেও ভয়ঙ্কর। অন্যদের ভয় দেখিয়ে, ঠকিয়ে, ক্ষতি করে এরা নিজেরা লাভবান হতে এক ফোঁটাও দ্বিধা করে না। প্রকৃত ভূত যদি কাউকে বলতে হয়, তবে এই ধরণের মানুষদের বললেই মনে হয় সবচেয়ে বেশী মানানসই হয়। না-কি এটা অত্যুক্তি হয়ে যায়? আপনারা কি বলেন??
কাজী হাসান
লেখক: quazih@yahoo.com
অক্টোবর ২৮, ২০১৮