হাসি থেকে কাশি......

সরকারী টিভির প্রযোজক: আপনি প্রথম দিনেই খবর পড়তে পড়তে কাশলেন কেনো? তাও আবার এমন জরুরী খবর পড়ার সময়??
সংবাদ পাঠক: জী মানে কাশি হঠাৎ চলে এলো।
প্রযোজক: কাশিটা আটকে রাখতে পারলেন না। বিজ্ঞাপনের সময় যত খুশী কেশে নিতেন।

সংবাদ পাঠক: আসলে কাশিটা অনেকক্ষণ ধরে আটকে রেখে ছিলাম, কিন্তু ওই খানটায় এসে আর পারলাম না।
প্রযোজক: এতই যদি কাশির সমস্যা, তা হলে কাশির ওষুধ খেয়ে আসলেন না কেন?
সংবাদ পাঠক: আগে তো কাশি নিয়ে এ রকম সমস্যা হয় নি।
প্রযোজক: তা হলে এই-ই বারই বা হলো কেন?
সংবাদ পাঠক: জী মানে, হাসি আটকাতে যেয়েই তো কাশিটা চলে এলো।

প্রযোজক: খবর পাঠ কি হাসির? না কি এটা কৌতুকের অনুষ্ঠান। আমার সাথে ফাইজলামি করেন?
সংবাদ পাঠক: জী মানে, জী মানে্‌---বিশ্বাস করেন কাশিটা ঠেকানোর সব চেষ্টাই আমি করেছি।
প্রযোজক: জী মানে, জী মানে করে আমার মেজাজটা আরও খারাপ করে দিয়েন না। খবরের মধ্যে হাসির কি দেখলেন?
সংবাদ পাঠক: জী মানে, আপনাদের লেখা খবরগুলো একটা থেকে আরেকটা হাসির!

প্রযোজক: আপনি কি মাথা ঠিক আছে?
সংবাদ পাঠক: আমার তো মনে হচ্ছিল, সবাইকে আমি রূপকথার গল্পের শেষের অংশটুকু পড়ে শুনাচ্ছি। সবাই happily ever after, মানে জনগণ মহাসুখে বসবাস করছে।
প্রযোজক: তাতে আপনার সমস্যাটা কোথায়?
সংবাদ পাঠক: রাজা মন্ত্রীরা বাহারী সব পোশাক পরে ক্যামেরার দিকে চর্বি ওয়ালা গুলগুলা মুখগুলো হাসি হাসি করে ডাহা সব মিথ্যা কথা বলছে। কথার তুবড়ি ফুটিয়ে সব সমস্যার অন্তসারশূন্য সমাধান করে ফেলছে। এ রকম ফেক (fake) কথা বার্তা শুনলে জনগণ কি, সংবাদ পাঠকেরও হাসি চলে আসে।

প্রযোজক: কই আর কোন পাঠক তো হাসে না?
সংবাদ পাঠক: হয়তো ওদের অধিক শোকে পাথর হয়ে যাবার অবস্থা। হাসতেই ভুলে গেছে...।।
প্রযোজক: আপনিও তাই করলে পারতেন। এখন আমার, আপনার দু জনেরই চাকরি যাবার যোগাড়।
সংবাদ পাঠক: জী মানে, যখন আপনাদের লেখা খবরে ছিল; এক মন্ত্রী বললেন, শিশু-কিশোর আন্দোলনকারীদের সব দাবি মেনেই দোষীদের আইনের মাধ্যমে কঠোর সাজা দেয়া হবে। আরও একজন বড় মন্ত্রী বড় গলায় বললেন, দেশে এখন কোন খাতেই দুর্নীতি হয় না। এ রকম পর পর দুটো বিশাল বড় কৌতুক আমাকে হাসতে বাধ্য করলো।

প্রযোজক: যা খবর হয়েছে, তাই সেখানে দেয়া হয়েছে। কেন যে আমার ভাগ্যে আপনার মতো অঘা, আনকোরা সংবাদ পাঠক পড়লো।
সংবাদ পাঠক: দেশটা এখন দুর্নীতিতে ঠাসা। অবৈধ টাকা আর ঘুষের খেলা চলবে, কিন্তু নিরাপদ রাস্তা হবে সেটা একেবারে অবান্তর কথা। শুধু রাস্তা কেনো, দুর্নীতি ঝেটিয়ে বিদায় না করলে ব্যাংকে গচ্ছিত সোনা-টাকা কোনোটাই থাকবে না।

প্রযোজক: আপনি আসলে বেশি বকর বকর করেন।
সংবাদ পাঠক: এইভাবে চলতে থাকলে দেশটার ভাঙ্গা মেরুদণ্ড একেবারে মিহি পাউডারের মতো মসৃণ গুড়া হয়ে যাবে। রাজা-মন্ত্রীদের ফাঁকা গালভরা বুলির জনগণ ফুটা পয়সারও দাম দেয় না। তার পরেও আপনারা সেই একই সংবাদ দিনের পর দিন দিয়ে চলেছেন। এই কারণেই আমি আপনাদের লেখা খবর পড়ে হাসির থেকে আসা কাশিকে কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারলাম না।

প্রযোজক: ফাইজলামো ছাড়েন.........
সংবাদ পাঠক: ব্যাপারটা ফাইজলামোর না। জনগণের ভালো হয় আর দুর্নীতি বন্ধ হয়, এমন কোনো কাজ আমাদের আমলা-কামলা-গামলা, রাজনীতিবিদরা করে না। শুধুই তাদের জনগণের কষ্টের সম্পদ হাতানোর ধান্দা। সাথে সারাক্ষণ ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো নিজেদের মিথ্যা পাবলিসিটি। এইগুলোকে আপনারা সংবাদ বলতে চান? আপনাদের ধারণা সে সব শুনে জনগণকে বিশ্বাস করবে, বাহবা দিবে। বিষয়টা চিন্তা করলে হাসি তো লাগবেই, কাশি তো আসবেই...।

প্রযোজক: এই সব আমার ব্যাপার না। আমি এখানে চাকরি করি......
সংবাদ পাঠক: তা হলে সংবাদ পড়তে না দিয়ে, কিছু কৌতুক পড়তে দিলেই পারেন। জনগণ অন্তত বুঝলো তাদেরকে ব্যাক্কল ভাবা হচ্ছে না, অবাস্তব রূপকথার গল্প বিশ্বাস করতে বলা হচ্ছে না। তাদের ভুয়া ভরসা দেয়া হচ্ছে না।

প্রযোজক: বুঝেছি খবর পাঠ আপনার কর্ম না। এই মুহূর্ত থেকেই আপনি চাকরি থেকে বরখাস্ত; মানে ফায়ার। সোজা রাস্তা ধরে বাড়ি চলে যান, তারপর যত-খুশী কাশেন আর হাসেন, হাসেন আর কাশেন; কেউ কিছু বলবে না। যতসব ঝামেলা, দেখি এখন নিজের চাকরিটা রক্ষা করতে পারি কি-না !


আগস্ট ২, ২০১৮

কাজী হাসান
লেখকঃ quazih@yahoo.com