অ্যানা ফ্রাঙ্ক 

ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর পরে পৃথিবীর অন্যতম সর্বাধিক পঠিত বইয়ের লেখক, বয়সে কিন্তু একেবারে তরুণ ছিল। কত বয়স? ১৩ বছর বয়স থেকে লেখা আরম্ভ করে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত লিখতে পেরেছিল। প্রত্যেকটা বড় ভাষায় সেই লেখা অনুবাদ হয়েছে। কিছু দেশে আবার স্কুলের পাঠ্য বইয়ে পর্যন্ত স্থান করে নিয়েছে। 

অনেকেই হয়ত তার সম্পর্কে জানো। না জানলে কোন অসুবিধা নাই। আমরা আজকে কথা বলবো, অ্যানা ফ্রাঙ্ককে নিয়ে। তাদেরকে ছোট একটা কামরায় পুরো পরিবারকে নিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল। বাইরের জগত ছিল একেবারে নিষিদ্ধ। না পারতো খেলতে, না পারতো বন্ধুদের সাথে হাসি-ঠাট্টা-গল্প করতে। বুঝতেই পারছো; ১৩ বছরের এক কিশোরী এই সব থেকে বঞ্চিত হলে কি হতে পারে! সে বিষণ্ণ হয়ে যেতে পারে। অ্যানা ফ্রাঙ্ক তার দুর্বিষহ সময়ে কলম তুলে নিয়েছিল। 

১৯৪২ সালের জুন মাসের ১২ তারিখ ছিল অ্যানার ১৩ তম জন্ম দিন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পূর্ণ গতিতে চলছে। জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার ইহুদি জাতিকে নির্মূল করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাবা-মা’র ইচ্ছা থাকলেও, মেয়েকে জন্মদিনে বেশী কিছু দিতে পারলেন না। তবে যা দিলেন, সেটা ইতিহাসের এক বিশাল বড় সাক্ষী হয়ে রইলো। তারা আদরের মেয়েকে লাল ডোরা কাঁটা কভারের আকর্ষণীয় ডায়েরি উপহার দিলেন। 

অ্যানা কল্পনায় এক জন বন্ধু বানালো। নাম দিল কিটি (Kitty)। বাস্তবে এই বন্ধুর কোন অস্তিত্ব না থাকলেও, তাকে প্রথম দিন-ই অ্যানা লিখলো, আমি আশা করছি আমি তোমার সাথে ভিতরের সব কথা ভাগাভাগি করে নিতে পারব। আমি এখন পর্যন্ত ভাগাভগি করে নেয়ার মত কাউকে পায় নি। আমি আরও আশা করছি, তুমি আমার আশ্বাস আর সহযোগিতার বিরাট একটা জায়গা হবে। 

টানা দু বছর অ্যানা কিটিকে তার লাল ডায়েরিতে একের পর পর এক সব বর্ণনা লিখে চলেছিল। এর মধ্যে যেমন ছিল ভাল, খারাপ লাগার কথা, তেমনি ছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ কালীন সময়ে সমাজের দুঃখ-বেদনার কথা। সাথে সাথে এসেছিল অনেক দার্শনিক কথা বার্তা। মানুষ বিস্মিত হয়ে পড়ে তার এই লেখা। একে শুধু ডায়েরির লেখা বললে ভুল হবে, বিশ্ব সাহিত্যে, অ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির দিনপঞ্জি বর্ণনা চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। 

২ 

অ্যানা ফ্রাঙ্কের লেখা বুঝতে হলে, সে সময়কার সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝাটা জরুরী। আগেই বলেছি, সে সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। জানো নিশ্চয়ই, যুদ্ধে একদিকে ছিল জার্মানি, ইতালি, জাপানকে নিয়ে অক্ষ শক্তি (Axis Powers) এবং অন্যদিকে বলা যায় ছিল বাকী বিশ্ব, যাদেরকে বলা হত যৌথ শক্তি (Allied Forces)। অক্ষ শক্তির মূল্য নেতা ছিল জার্মানির চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার। তার ভীষণ ক্রোধ ছিল ইহুদি ধর্মের মানুষদের উপর। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মারাত্মক পরিকল্পনা তার ছিল। 

অ্যানা ফ্রাঙ্কের পুরো নাম ছিল এনেলিস মেরি ফ্রাঙ্ক ( Annelies Marie Frank)। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে, এক সম্ভ্রান্ত ইহুদি পরিবারে, ১৯২৯ সালের জুন মাসের ১২ তারিখে তার জন্ম। মা এডিথ ফ্রাঙ্ক ও বাবা ওটো ফ্রাঙ্ক। বাবা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন। পরে তিনি জার্মানি ও নেদারল্যান্ডে ব্যবসা করেছিলেন। অ্যানা’র বোন মারগট ছিল বয়সে তিন বছরের বড়। 

অ্যানা’র জন্মের সময়কালে জার্মানির সমাজ, বড় ধরণের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এই পরিবর্তন অ্যানা’র পরিবারের সুখ-শান্তি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানির উপর চাপিয়ে দেয়া ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তি ভীষণভাবে দেশটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। জার্মানির অর্থনীতি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এ রকম কঠিন সময়ে ইহুদি বিরোধী হিটলার ও তার নাজি পার্টি শক্তিশালী হতে থাকে। ১৯৩৩ সালে নাজি পার্টি জার্মানিতে সরকার গঠন করে। 

হিটলার ক্ষমতায় যাওয়ার সাথে সাথেই অ্যানা’র বাবা ওটো সিদ্ধান্ত নিলেন, জার্মানিতে তাদের থাকাটা আর নিরাপদ না। অল্প সময়ের মধ্যে তারা নিজের দেশ ছেড়ে নেদারল্যান্ডের হেগে যেয়ে বসত গাড়লেন। অ্যানা স্কুলে ভর্তি হল, বাবা নতুন করে ব্যবসা আরম্ভ করলেন। পরিবার আবার নিজেকে মুক্ত ভাবা আরম্ভ করলো। পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে মিলে মিশে তারা থাকতে লাগলেন। অ্যানা’র এর মধ্যে অনেক বন্ধু হল। তার মধ্যে কেউ ছিল জার্মান কিংবা ওলন্দাজ; কেউবা খ্রিস্টান অথবা ইহুদি। স্কুলে অ্যানা মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। 

কিন্তু অ্যানা’র স্বাভাবিক বেড়ে উঠা একেবারে ক্ষণস্থায়ী হল। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে নাজি জার্মানি পোল্যান্ড দখল করে নিল, পরে সেখান থেকে সংঘাত চারিদিকে ছড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত করলো। ১৯৪০ সালের মে মাসের ১০ তারিখে নাজি বাহিনীর কাছে নেদারল্যান্ড সেনা বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ফলে নেদারল্যান্ডও চলে যায় হিটলারের নিয়ন্ত্রনে। 

১৯৪০ সালের অক্টোবর থেকে নেদারল্যান্ডে, ইহুদি বিরোধী নিয়ম কানুন চালু হতে থাকে। ইহুদিদের পোষাকে হলুদ রঙের তাঁরা থাকতে হত, এবং বলা হল তারা কোন ব্যবসায়ের মালিক থাকতে পারবে না। অ্যানা ও তার বোনকে স্কুলও পরিবর্তনে করতে হল। শুধুমাত্র ইহুদি ছেলেমেয়েদের জন্যে বরাদ্ধকৃত স্কুলে ভর্তি করা হল। ওটো ফ্রাঙ্ক তার ব্যবসা দুই খ্রিস্টান সহযোগীর নামে লিখে দিলেন। যদিও তিনি অগোচরে সহযোগীদের দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিছুদিন পরে ১৯৪২ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখে অ্যানা’র বড় বোনের নামে সরকারি সমন এলো। তাকে জার্মানির এক কন্সেনট্রেশন ক্যাম্পে হাজিরা দিতে হবে। তোমরা নিশ্চয়ই কন্সেনট্রেশন ক্যাম্প সম্পর্কে শুনেছো। সেখানে ইহুদিদের দিয়ে কঠিন ও কষ্টকর সব কাজ করানো হত। সাথে সাথে চলত অমানবিক অত্যাচার। সেখানে অনেকে প্রতিকুল অবস্থা সহ্য করতে না পেরে মারা যেত। তা ছাড়া ব্যাপক সংখ্যক ইহুদি খুন হয়েছে জার্মান বাহিনীর গুলিতে আর তাদের বেয়নেটের আঘাতে।

সমন পাওয়ার পরের দিন-ই ফ্রাঙ্ক পরিবার গোপন এক জায়গায় যেয়ে আশ্রয় নিল। ওটো ফ্রাঙ্কের ব্যবসার পেছনে এক নিরিবিলি পরিত্যক্ত জায়গায় গোপন কামরা থাকার জন্যে প্রস্তুত করা হল। ফ্রাঙ্ক পরিবারের সাথে যোগ দেন, তার ব্যবসায়ের এক ইহুদি পার্টনার ও তার স্ত্রী, পুত্র। তার ব্যবসায়ের কয়েকজন বিশ্বস্ত কর্মচারী, তাদেরকে গোপনে লুকিয়ে খাবার-দাবার পোঁছে দিতেন। তাদের কাছ থেকেই এই দুই পরিবার বাইরের পৃথিবীর খোঁজ খবরও সংগ্রহ করতেন। 

দুই পরিবার পুরো দু বছর এই পরিত্যক্ত গোপন অস্বাস্থ্যকর জায়গায় ছিলেন। এক বারের জন্যেও বাইরের আসেন নি। বুঝতেই পারছো বন্ধুরা, এ রকম হলে সময় কাটানো কত কষ্টকর হতে পারে! অ্যানা তখন প্রতিদিন ডায়েরি লিখতো। তার পাশাপাশি বেশ কিছু গল্প এবং একটা নভেল লেখার কাজ আরম্ভ করেছিল। বিষয়বস্তু গোপন জায়গায় থাকাকে কেন্দ্র করে ছিল। এই সব লেখায় কিশোরী অ্যানার সৃজনশীলতা, চিন্তা ও আবেগের গভীরতার স্পষ্ট পরিচয় মিলে। 

গোপন জায়গার খবর আর গোপন থাকলো না। নাজিরা ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাসের ৪ তারিখে এসে দু পরিবারের প্রত্যেকে গ্রেপ্তার করলো। লুকানো আবাসের খবর কে ফাঁস করেছিল, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। প্রথমে তাদেরকে উত্তরপূর্ব নেদারল্যান্ডের এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে পোল্যান্ডের কুখ্যাত আউশইটজ মৃত্যু ক্যাম্পে (Auschwitz Death Camp) তাদের যেতে হয়। সেখানে পোঁছনোর পরে, মহিলা ও পুরুষদের আলাদা করে ফেলা হয়। সর্বশেষ ঐ দিনই, ওটো ফ্রাঙ্ক তার স্ত্রী ও কন্যাদের দেখেছিলেন। 

আউশইটজ মৃত্যু ক্যাম্পে দু বোনকে কয়েক মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হল। ভারী পাথর, ঘাসের আস্তরণ বয়ে নিয়ে নিয়ে যেতে হত। একই বছরের শীতকালে জার্মানির বার্গান-বালসান কনসেন্ট্রেশন (Bergen-Belsen Concentration Camp) ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হল। মা এডিথ ফ্রাঙ্ককে কন্যাদের সাথে বিচ্ছিন্ন করে আউশইটজ ক্যাম্পে রেখে দেয়া হল। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর, ১৯৪৫ সালের জানুয়ারির ৬ তারিখে তার মৃত্যু হয়।

বার্গান- বালসান ক্যাম্পের অবস্থা আরও ভয়াবহ ছিল। খাদ্যের অভাব ছিল মারাত্মক, পয় ব্যবস্থা ছিল খুবই খারাপ। ফলে বিভিন্ন রকমের অসুখ-বিসুখে ক্যাম্প ছিল জর্জরিত। দু বোনই টাইফুস (Typhus) নামে ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে, দু জনই অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে মৃত্যু বরণ করে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ব্রিটিশ বাহিনী ক্যাম্পের সব বন্দীকে মুক্ত করেছিল। কিন্তু দু বোন আর সে সময়ে পৃথিবীতে নাই। দ্বিতীয় যুদ্ধকালীন মহা দুর্যোগের (Holocaust) সময়ে দশ লক্ষ্যের উপরে ইহুদি শিশু মারা যায়। দু বোন তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত।

বাবা ওটো ফ্রাঙ্ক যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, স্ত্রী ও দু কন্যার মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পান। তার ব্যবসায়ের এক সহযোগী মিয়েপ গিয়েস ( Miep Gies) তাদের গোপন আবাস থেকে পাওয়া অ্যানা’র ডায়েরি সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। তিনি বাবার কাছে সেটা পোঁছে দেন। বাবা সেই ডায়েরি পড়ে একেবারে অবাক। ছোট মেয়ের চিন্তা, আবেগ, সহানুভূতির গভীরতায়, তিনি যেন নিজের কন্যাকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন।

বাবা ওটো ফ্রাঙ্ক, মেয়ে অ্যানা ফ্রাঙ্কের লেখা ডায়েরি প্রকাশের ব্যবস্থা করলেন। ইংরেজিতে ছোট করে বইয়ের নাম করণ হল, কিশোরী মেয়ের ডায়েরি ( The Diary of a Young Girl)। এক এক করে ৬৭ টা ভাষায় প্রকাশিত হল। শুধু তাই না, তখন থেকে অসংখ্য মঞ্চ নাটক, এবং বেশ অনেকগুলো ছায়াছবি তৈরি হয়েছে অ্যানা’র জীবনী আর লেখা নিয়ে।

অ্যানা ফ্রাঙ্কের লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে তোমাদের না হয়, তার সাথে আরেকটু পরিচয় করিয়ে দেই। তোমরা তো এর মধ্যেই জেনেছো, কি পরিস্থিতিতে সে ডায়েরি লিখেছিল। তখন মনের মধ্যে দুঃখ আসাটা ছিল একেবারে স্বাভাবিক। কিন্তু সে দুঃখকে জয় করেছিল। তার ভাষায়, যতদিন আমি সূর্যের কিরণ আর মেঘহীন আকাশ উপভোগ করতে পারি, তত দিন কি করে আমি সুখি না হয়ে থাকতে পারি?

প্রচণ্ড আশাবাদী ছিল এই কিশোরী লেখিকা। মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে ছিল অগাধ বিশ্বাস। সে স্পষ্ট জানিয়েছিল, কি চমৎকার ব্যাপার, পৃথিবী পরিবর্তনের জন্যে কাজ করতে এক মুহূর্ত অপেক্ষা করার দরকার নাই। আরেক জায়গায় সে বলে গেছে, দেখো একটা মোমবাতি একই সাথে কেমন অন্ধকারকে অস্বীকার ও অন্ধকারকে সংজ্ঞায়িত করছে। সৌন্দর্যের জন্যে ছিল তার প্রচণ্ড মমতা। সে লিখে গেছে, আমি খুঁজে পেয়েছি, তোমার জন্যে কিছু না কিছু সৌন্দর্য ; প্রকৃতি, সূর্য কিরণ, আর মুক্তির মধ্যে অবশিষ্ট আছে। নিশ্চিতভাবে সেটা তোমাকে সাহায্য করতে পারে।

তোমরা যারা মুক্ত চিন্তা কর, তাদের জন্যে অ্যানা খুব সুন্দর কথা বলে গেছে। তার ভাষায়, মানুষরা তোমাকে মুখ বন্ধ করতে বলতে পারে, কিন্তু সেটা তোমার মতামত তৈরি কখনো বন্ধ করতে পারবে না। এবং তোমরা যারা লিখতে পছন্দ কর, তাদের উৎসাহিত করার জন্যে বলে গেছে, মানুষের থেকে কাগজের ধৈর্য অনেক বেশী।

কিশোরী অ্যানা নারীদের সম্পর্কে বলে গেছে, নারীরাও সম্মানের দাবীদার। সাধারণভাবে বলতে গেলে, সারা বিশ্বে পুরুষদের সম্মান করা হয়, তা হলে নারীরা তাদের ভাগের অংশটা পাবে না কেন? ......নারীরা মানব জাতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্যে সংগ্রাম করেছে, কষ্ট স্বীকার করেছে। শক্তিশালী, সাহসী সৈনিক বানিয়েছে। আরেক জায়গায় নিজের উপর পূর্ণ আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বাবা-মা রা তোমাকে ভাল উপদেশ দিতে পারেন অথবা সঠিক পথে পোঁছে দিতে পারেন। কিন্তু নিজের চরিত্র গঠনের হাতিয়ার তোমাদের নিজের হাতে।

আমি তোমাদের জন্য আরও কিছু অ্যানা ফ্রাঙ্কের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। তোমরা যেহেতু এখন তার লেখা ও চিন্তার প্রেক্ষাপট জান, এই মহীয়সী কিশোরী কি বলতে চেয়েছিল, তা সহজেই বুঝতে পারবেঃ

·       যে সুখী, সে অন্যদেরও সুখী করতে পারে।

·       আমি সব কিছুর পরেও বিশ্বাস করি, মানুষ আসলে হৃদয়ে সুন্দর।

·       আমরা সবাই সুখের অন্বেষণে বেঁচে থাকি, আমাদের জীবন ভিন্ন হলেও, এই ক্ষেত্রে আমরা অভিন্ন।

·       আমি অনেক চিন্তা করি, কিন্তু বলি অনেক কম।

·       কারো অনুভূতিকে অস্বীকার করা যায় না, সেটা যত অন্যায্য ও অকৃতজ্ঞ মনে হউক না কেন।

·       চূড়ান্ত কথা, দয়া ও বিনম্র আগ্রহ হল, সব চেয়ে ধারালো অস্ত্র।

·       যেখানে আশা, সেখানেই জীবন। আশাই আমাদের নতুন করে সাহস দেয়, এবং আমাদের আবার শক্তিশালী করে তুলে।

অ্যানা’র ডায়েরি শুধুমাত্র ইতিহাসের একটা ক্রান্তিকাল ধরে রাখে নি, এটা তার অসাধারণ ভঙ্গিতে গল্প বলা এবং তার প্রচণ্ড জীবন বোধের পরিচয় বহন করছে। অ্যানা’র লেখা ঘৃণা, ধ্বংস, যুদ্ধের পটভূমিতে বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসার গল্প। সে কোটি মানুষের কষ্ট প্রচণ্ডভাবে উপলব্ধি করেছিল। তার পরেও আকাশের দিকে তাকিয়ে অ্যানা ফ্রাঙ্কের মনে হয়েছে, এই নৃশংসতার এক দিন অবসান হবে। পৃথিবীতে শান্তি আসবে। পৃথিবীতে শান্তি আসতেই হবে।

শেষে অ্যানা ফ্রাঙ্কের আরেকটা উদ্ধৃতি দিয়ে, আজকের এই লেখার ইতি টানবো, আমি বেশীর ভাগ মানুষের মত বৃথা একটা জীবন কাটাতে চাই না। আমি মানুষের উপকার করতে চাই, আনন্দ দিতে চাই। যাদেরকে আমি দেখিনি, তাদেরকেও। আমি মরণের পরেও বেঁচে থাকতে চাই। 

নভেম্বর ৮, ২০১৫