কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের দয়ার বিশালত্ব ব্যাখ্যা করতে যেয়ে কোরআন শরিফে বলা হচ্ছে, “পৃথিবীর সব গাছ যদি কলম এবং সবগুলো মহাসাগরের পানি যদি কালি হতো; আরও সাতটা মহাসাগর যদি বাড়তি কালি হতো, তার পরেও আল্লা তা আলা’র মাহাত্ম্য বর্ণনা করে শেষ করা যেতো না। আল্লাহ সর্ব শক্তিমান, সর্ব জ্ঞানী।”(সূরা লুকমান ৩১ঃ২৭)। হাদিসে আছে, এক বার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (দঃ) কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আল্লাহ’র কোন অনুগ্রহ (favor) আমাদের জন্যে ন্যূনতম? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমরা যে শ্বাস-প্রশ্বাস নেই, সে টাই আমদের জন্যে আল্লাহ’র কাছ থেকে পাওয়া ন্যূনতম অনুগ্রহ।
বন্ধুরা বুঝতেই পারছেন, আমরা যে শ্বাস প্রশ্বাস ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব, সেটাই হলো আমাদের জন্যে পরম করুণাময় আল্লাহ’র ন্যূনতম অনুগ্রহ। তা হলে, মাথার উপরে ছাদ, ক্ষুধা নিবারণের জন্যে খাদ্য, কিংবা সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া ও ভালোবাসা—এই গুলি কি? এ গুলো সব আমাদের জন্যে আল্লাহ’র বাড়তি অনুগ্রহ।
আপনাকে যদি বলা হয়, আমাদের জন্যে আল্লাহ’র অনুগ্রহের সংখ্যা কয়টি? আপনি যদি হিসেব করা আরম্ভ করেন, তা হলে দেখবেন কোনোভাবেই গুণে শেষ করা যাচ্ছে না। কোরাআন শরিফে অবশ্য এর উত্তর আমরা পাই, কেও যদি আল্লাহ’র অনুগ্রহ গুনতে চায়, তার শেষ সে কখনো পাবে না। আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টি, সূর্যের আলো আর তাপ, মাঠে শস্য, গবাদি পশু, রাতের নিদ্রা-বিশ্রাম থেকে আরম্ভ করে রোগ মুক্তি, কোনটি আল্লাহ’র অনুগ্রহ না? কোরান শরিফে আরও আছে, এই পৃথিবীতে এমন কোন চলমান জীব নাই, যার খাদ্য আল্লাহ জোগান দেন না। (সুরা হুদ ১১ঃ১৬)
আমাদের জন্যে আল্লাহ’র অপরিসীম অনুগ্রহের সাথে সাথে যে প্রশ্নটা চলে আসে, তা হলো আমরা কি এই অনুগ্রহ, নেয়ামত কতটুকু বুঝতে পারি, তার জন্যে কি আমরা কৃতজ্ঞ? কোরান শরিফে বলা হচ্ছে, আল্লাহ সুবহান আ তা আলা মানবজাতির জন্যে দয়ায় পরিপূর্ণ, কিন্তু তাদের বেশীর ভাগই অকৃতজ্ঞ।(সুরা ইউনুস ১০ঃ৬০)
মুসলমানদের বিশ্বাসের একটা বড় অঙ্গ আল্লার প্রতি কৃতজ্ঞতা বা শুকর। এই শুকর থাকা আমাদের মধ্যে এক বিশাল আশীর্বাদ। আমাদের যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে শেখায়। অন্যের কোন কিছু থেকে দ্বেষ করা, প্রতিহিংসা পরায়ণ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এর থেকে আমরা বৈষয়িক চাপ, দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষার পাশাপাশি, আমাদের মন আনন্দ ও শান্তিতে ভরে থাকতে পারে। আমরা কৃতজ্ঞ থাকলে, আল্লাহ আমাদের উপরে তার অনুগ্রহের পরিমাণও বাড়িয়ে দেন। আমরা কৃতজ্ঞ না থাকলে, বা শুকর না করলে আমাদের জন্য কঠিন সাবধান বাণী দেয়া হয়েছে। আল্লাহ সুবহান আ তা আলা বলেছেন, “(মনে রেখো) তোমার মালিক যখন ঘোষণা করছেন: ‘তুমি যদি কৃতজ্ঞ থাকো (বিশ্বাস গ্রহণ করে ও আল্লাহকে ইবাদত করে), আমি তোমাকে আরও দিবো (আমার আশীর্বাদ), কিন্তু তুমি যদি অকৃতজ্ঞ হও, জেনে রেখো তোমাদেরকে আমার কঠিন শাস্তি দেয়া হবে’।” (সুরা ইব্রাহিম ১৪ঃ৭)।
আমরা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের প্রতি কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব নবী করিম (দঃ) থেকে বিভিন্ন ভাবে পাই। তিনি তার অন্যতম প্রিয় সাহাবী মুয়াদ ইবন জাবালকে বলেছিলেন, প্রতি বার নামাজ পড়ে তিনি যেন বলতে না ভুলেন, ‘ও আল্লাহ আমাকে মনে রাখতে সাহায্য করুন, যাতে আপনাকে আমি সঠিক ভাবে ধন্যবাদ (কৃতজ্ঞতা)জানাই এবং ইবাদত করি।’
সুরা আল রাহমানের একটা উদ্ধৃতি দিয়ে আমি, আজকের আলোকপাত শেষ করতে চাই; ইনশা আল্লাহ। এই সুরার ৭৮ আয়াতের মধ্যে পরম করুণাময় আল্লাহ তা আলা ৩১ বার মানব ও জীন কুলকে প্রশ্ন করেছেন, তোমরা তোমাদের মালিকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করতে পারো? প্রকৃতপক্ষে আমরা তার অগুনতি অনুগ্রহের মধ্যে একটিকেও অস্বীকার করতে পারি না।
দোয়া করি আমরা যেন আল্লাহ তা আলার অগণিত অনুগ্রহের প্রতি সব সময়ে কৃতজ্ঞ থাকতে পারি। শুকর আলহামদুল্লিলাহ। আমিন।।
কাজী হাসান
লেখকঃ quazih@yahoo.com