দোলে মন দোলে অকারণ হরষে

দূরত্বের সংজ্ঞা কেমন দ্রুত বদলিয়ে যাচ্ছে। এই তো মাত্র বছর ত্রিশেক আগে পর্যন্ত সব চেয়ে দ্রুত খবর দেয়ার মাধ্যম ছিল টেলিগ্রাম। বাবা’র হয়ত ভীষণ অসুখ মানে শেষ অবস্থা কিংবা তিনি হয়ত ইতিমধ্যে পরলোকগমন করেছেন, তখন শহর কিংবা বিদেশে অবস্থানকারী পুত্রের কাছে সংবাদ পাঠান হত, ‘Father sick, come sharp’. যার অনুবাদ করলে দাঁড়াবে, ‘বাবা অসুস্থ, দ্রুত আস’। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির মানুষ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতো। সেই জন্যে প্রাপক টেলিগ্রাম পাওয়া মাত্রই ধরে নিত, ভীষণ কিছু একটা ঘটে গেছে।

প্রেরক পোস্ট অফিস থেকে প্রাপক পোস্ট অফিসে টরেটক্কা পদ্ধতিতে টেলিগ্রাফ পাঠান হত। অনেকেই হয়ত টরেটক্কা বিষয়টা বুঝবেন না। বৈদ্যুতিক সিগনাল পাঠিয়ে অল্প শব্দে যন্ত্রের মাধ্যমে বার্তা যেত। টেলিফোন ছিল, কিন্তু খরচ হত মেলা। ট্রাঙ্ককলের মাধ্যমে দূরের জায়গায় ফোন করতে হত। এক অপারেটর থেকে আরেক অপারেটর করতে করতে গন্তব্যের ফোন বেজে উঠত। খবর পাঠানোর আরেকটা মাধ্যম ছিল, স্ট্যাম্প লাগিয়ে চিঠি পাঠান। খরচ কম হলেও, প্রচুর সময় লাগত চিঠি যেতে। বিদেশ হলে তো কথাই নাই। বিমান না পেলে জাহাজে করে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যেতে যেতে কমপক্ষে মাস তিনেক!

সম্ভবত সময়কাল সত্তরের দশকের শেষের দিক। পাপিয়া সারোয়ারের গাওয়া একটা গান খুব বিখ্যাত হল, “নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন, নাইরে টেলিগ্রাম”। ভালোবাসার মানুষদের কাছে প্রতিটা খবর খুবই জরুরী। সেটা পৌঁছানোর জন্যে এক মিনিটও বুঝি দেরী করা সম্ভব না। পাপিয়ার গানটা যোগাযোগবিহীন ভালোবাসার মানুষদের কষ্টের অনুভূতিটা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছিল। গানটি অল্প সময়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়। তখনকার দিনে টিভি চ্যানেল ছিল মাত্র একটা বিটিভি। তাও আবার দেশের অধিকাংশ জায়গায় টিভি দেখা যেত না। একমাত্র রেডিও’র শ্রোতা দেশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। না ছিল ইন্টারনেট, না ছিল ফেসবুক, ইউটিউব। তার পরেও, এক মুখ থেকে আরেক মুখ করতে করতে গানটা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

কিন্তু এখনকার অবস্থা একেবারে অন্যরকম। পুরো বিশ্বটাই সবার হাতের মুঠায়। আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবার হাতে হাতে মুঠোফোন মানে সেলফোন। মুঠোফোন শব্দটা কিন্তু দারুণ। হাতের মুঠোর শোভা সারাক্ষণ বাড়িয়ে চলেছে, তাই নাম দেয়া হল মুঠোফোন। তবে বেশীর ভাগ বাঙালিই এখন পর্যন্ত হয় বলে মোবাইল না হয় সেলফোন বলে। যাই হোক সেলফোনের কারণেই নিমিষের মধ্যেই টেক্সট ম্যাসেজ পোঁছে যেতে পারে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে। চাইলে নম্বর চেপে ফোনেও আলাপ সেরে নেয়া যায়। খরচ তেমন বেশী না। বাংলাদেশে এই এক ব্যাপারে কিন্তু সুষ্ঠু গণতন্ত্র পৌঁছেছে। জনগণ চাইলে যে কারোর সাথে মুহূর্তেই যোগাযোগ করতে পারছে।

শুভ আজ তিন দিন হয়ে গেল রিমিকে ধরার চেষ্টা করছে। ধরা মানে হাতে ধরা না, যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। ফেসবুকে বারে বারে নক করে ব্যর্থ হচ্ছে। টেক্সট পাঠিয়েছে বেশ কয়েকবার। কোন উত্তর নাই। শেষ সম্বল হিসেবে ফোন করল। না সেখানেও কোন সুবিধা হল না। ফোন বেজেই চললো। রিমির কোন খবর নাই। এ রকম হওয়ার কথা না। শুভ যেখানেই থাকুক না কেন, দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার রিমি ফোন করেই। সেটা দেশ কিংবা বিদেশ যেখানেই হউক না কেন।

শুভ সিঙ্গাপুরে এসেছে অফিসের কাজে। এইটা প্রথমবার না। বছরে তিন চার বার তাকে এই দেশে আসতে হয়। সে যেই বিদেশী কোম্পানিতে কাজ করে, তাদের হেড কোয়ার্টার সিঙ্গাপুরে। বাংলাদেশে ইদানীং তাদের ব্যবসা প্রতি বছরই বাড়ছে। সাথে সাথে বাড়ছে শুভ’র খ্যাতি ও প্রয়োজনীয়তা। একবার তো দুবাইতে বদলি করে দিতে চাইলো। বললও, ওখান থেকে আফ্রিকার বাজারটা তদারকি করতে। কোম্পানি বলছিল, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করলে ওই অঞ্চলয়ের ব্যবসা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। অনেক কষ্টে ধরাধরি করে, সে বদলি ঠেকিয়েছিল। সমস্যাটা হল রিমিকে নিয়ে। সে দেশের বাইরে কোন ভাবেই যাবে না। হাতে গুণে মাত্র কয়েকবার তার সাথে বিদেশে এসেছে। তার এক কথা। বিদেশ তার ভাল লাগে না। এই জন্য সুযোগ থাকলেও, রিমিকে সাথে করে আনা হয় না।

শুভকে সিঙ্গাপুরে আসলে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকতে হয়। তার পরেও সুযোগ পেলেই সেলফোন দিয়ে ফোন, টেক্সট, ম্যাসেজ, ফেসবুক--সব মাধ্যমেই চেষ্টা করছে। খুব চিন্তা হচ্ছে। টেনশন বেড়েই চলেছে। মেয়েটা কেন যে রেসপন্স করছে না। কোন বিপদ হল না তো। রিমির মা মানে স্বাশুরিকে ফোন করা যেতে পারে। না বিষয়টা ইচ্ছা করল না। তার ধারনা জামাই হিসেবে শুভ একেবারে নিম্ন মানের। অপরাধ তার একটাই। তার মেয়ের সাথে প্রেম করেছে। শুধু তাই না নিজেরা কাজী অফিসে যেয়ে বিয়ে করেছে। এতে সমাজে তার বিশিষ্ট পরিবারের মুখে চুনকালি পড়েছে। এমেরিকা প্রবাসী এক ছেলে নাকি অফার করেছিল, তার সাথে রিমিকে বিয়ে দিলে মা, মেয়ে দু জনকেই এমেরিকা নিয়ে যাবে। সেখানে তার নাকি ওয়াইট হাউসের সাইজের বিরাট একটা বাড়ি আছে। শুভ কথাটা শুনে হাসতে হাসতে বলেছিল, “ব্যাটা নিশ্চয়ই ওখাকানাকার কোন ওসি কিংবা ডিসি।” পরে হাসিটা কমিয়ে রিমিকে ব্যাখ্যা করেছিল, “ওসি হল ওনিয়ান কাটার আর ডিসি হল ডিশ ক্লিনার।”

রিমির কোন বান্ধবীকে ফোন করা যেতে পারে। নাহ সেটা ইচ্ছা করলো না। ওরা কি ভাববে, বিয়ের দু বছরের মাথায় বউয়ের খবর বাইরের মানুষ থেকে নিচ্ছে। অফিসের পরে হোটেলে ফিরে এসে আবার নতুন করে ফোন, টেক্সট, ম্যাসেজ করলো। বেশ অনেকক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মনে হচ্ছিল ফোনটা দপ করে জ্বলে উঠবে, মানে রিমির থেকে কিছু একটা আসবে। এই বুঝি আসলো করতে করতে মেলা রাত হয়ে গেল। কাল আবার সেই ভোর ছয়টার সময় উঠতে হবে। একবারে সকাল সাড়ে সাতটায় কোম্পানির চেয়ারম্যানের সাথে মিটিং। হঠাৎ মনে হলে চিন্তাগুলো কেমন জমাট বেঁধে যাচ্ছে। আরে কি অদ্ভুত সে স্পষ্ট দেখতে পারছে, চিন্তাগুলো মাথার থেকে বের হয়ে ভেসে বেরাচ্ছে। মাথাটা খুব হালকা মনে হতে লাগল। মনের মধ্যে এখন শুধু আনন্দ আর আনন্দ।

শুভ’র খুব গান গাইতে ইচ্ছা করল। হেঁড়ে গলার মালিক হওয়ার কারণে সে বাথরুম ছাড়া অন্য কোথাও গান গায় না। তার পরেও গলাটা ঝেড়ে নিয়ে গান ধরল, “নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন, নাইরে টেলিগ্রাম”। চীনা চেয়ারম্যান সাহেবের বাংলা বুঝার কথা না। তার পরেও উনি মনে হয় বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছেন। ভাবটা ও রকম সেকেলে গান গাইছে কেন। শুভ যে চিন্তাটা মাথার কাছাকাছি বাতাসে ভেসে বেরাচ্ছিল, তার দিকে তাকাতেই সে ঘুরে শুভ’র মাথার মধ্যে ঢুকল। শুভ’র মাথায় নতুন একটা আইডিয়া এলো। এত বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং তার পরে তার বড় বস; তাকে কোনভাবেই অখুশী রাখা যায় না। শুভ নতুন করে গান ধরল, “নাইরে টেলিফোন, নাইরে টেক্সট, নাইরে ইন্সটাগ্রাম; বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম”।

বাহ চেয়ারম্যান সাহেবের গান এবার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রথমে তিনি চেয়ারে বসেই কিছুক্ষণ ডান হাত দিয়ে তালে তালে তুড়ি দিলেন। তারপরে চেয়ার সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। পরের মুহূর্তেই তাকে টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে নাচতে দেখা গেল। ভাগ্যিস রুমে অন্য কেউ নাই। দেখলে কি ভাবতো। শুভ গান গাচ্ছে আর তার সাথে তাল মিলিয়ে টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান নাচছে। শুভ’র মনে হল, গানটা সাড়ে তিন মিনিটে শেষ করা যাবে না; দীর্ঘ সময় ধরে গাইতে হবে। উনি মাত্র নাচ আরম্ভ করেছেন। এইদিকে শুভ’র মাথায় অন্য কোন গানের কলি মনে এল না। সে একইগান বারে বারে গেয়ে চলল। তাও আবার এই দুই লাইন। উনিও একইভঙ্গিতে নেচে চলেছেন। শুভ ঠিক করে ফেলল, যতক্ষণ না বড় সাহেব গান থামাতে বলছেন কিংবা নিজে নাচ থামাচ্ছেন; তখন সে গেয়েই যাবে। যা আছে কপালে।

হঠাৎ মনে হল, কেমন যেন বেসুরো বাজনা বাজছে। বাজনা কেমন পরিচিত, তবে শুনতে বেশ মিষ্টি। কিন্তু এই গানের সাথে একেবারেই মিলছে না। শুভ এই দিক ওই দিক তাকাল। কে এমন বিরক্তিকর কাজটা করছে? বেআক্কেল লোকটাকে কঠিন কোন গালিটা দিতে পারলে ভাল লাগত। সে কি দেখছে না, বাজনা ছাড়াই সে কি সুন্দর গেয়ে চলেছে। তার গানের সব চেয়ে বড় সমজদার কোম্পানির চেয়ারম্যান ক্লান্তিহীনভাবে নেচে চলেছেন। কিন্তু রুমে তো তারা দু জন ছাড়া আর কেউ নাই। শুভ’র চোখ খুঁজতে লাগলো বে রসিক ও বে সুরো বাজনাবাদকে।

ধীরে ধরে বাজনা বাড়তে লাগলো। শুভ বাজনা’র উৎস খুঁজতে লাগল। এইদিকে বাজনার শব্দ বেড়েই চলেছে। চোখ পড়ল, টেবিলের কোণায় রাখা সেলফোন থেকে বাজনা আসছে। তার প্রিয় রিংটন বাজছে। শুভ ভীষণ বিরক্ত হয়ে গান বন্ধ করতে বাধ্য হল। ফোনটা হাত দিয়ে তুলে নিয়ে, ঘুম ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল, “হ্যা---লো”। বড় সাহেব মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে গেলেন। শুভ বুঝল তার তন্দ্রা এসেছিল। তার মধ্যেই সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল।

ওইদিক থেকে রিমির গলার আওয়াজ ভেসে এলো, “সরি জান। হঠাৎ করে ছোট মামার সাথে মুন্সিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। তাড়াহুড়ার মধ্যে ফোনটা ভুল করে ফেলে গেছি। তোমার সিঙ্গাপুরের নম্বরটাও ছিল ফোনটার মধ্যে। তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি। আমি জানি তুমি খুব টেনশন করছো। আমি সরি। খুব স----রি।”

শুভ মাথায় ’র অন্য চিন্তা কাজ করছে। সে চুপ করে থাকলো। রিমি শুভ’র প্রিয় সেই সোহাগী গলা দিয়ে বলতে লাগল, “বললাম তো সরি। এইবারের মত মাফ করে দাও। আর কখনও এ রকম হবে না। যদি চাও পরের বার আমি তোমার সাথে বিদেশে যাব। প্লিস রাগ করে থেকো না লক্ষ্মীটি।” রিমি মনে হচ্ছে একেবারে বিনয়ের অবতার হয়ে পড়েছে। শুভ বললে সে এখন বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে এসে থাকতেও রাজী হয়ে হবে।

শুভ’র মাথার মধ্যে কিছুক্ষণ আগেকার দৃশ্যগুলো কাজ করছে। তার গানের সাথে এত বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান নাচছে। তাও আবার নিজের লেখা গানের তালে তালে। যদিও পুরোটা নিজের বলা চলে না। পুরনো একটা গানকে ইম্প্রোভাইজ মানে আধুনিক রূপ দিয়েছে। তার যে সঙ্গীতে এত বড় প্রতিভা আছে, সেটা এতদিন নিজেও জানতো না। ফোনের অন্যদিকে রিমি একেবারে অস্থির হয়ে পড়েছে, “সরি, সরি, সরি। তিন সরি। আর চুপ করে থেকো না। তুমি না হয় তোমাদের চেয়ারম্যানকে বলে দিও; তুমি পোস্টিং নিচ্ছ। তুমি বিদেশে মুভ করতে রাজী।”

নাহ, তেমন কোন লাভ হল না। শুভ নীরবই থেকে গেল। তার এখন রিমির সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। শুভ’র আবার গান গাইতে ইচ্ছা করছে। চেয়ারম্যান সাহেব অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই গানটা ধরতে হবে। উনি কিন্তু বেশ নাচতে পারেন। এতক্ষণে নিশ্চয়ই টেবিল থেকে নেমে গেছেন। শুভ’র রিমির কোন খবর জানতে ইচ্ছা করছে না। তার গান গাইতে ইচ্ছা করছে। একেবারে গলা ছেড়ে। সে গাইবে। টেবিলের উপরে চেয়ারম্যান স্যার নাচবে। তার হাতে চেয়ারম্যান স্যার, পুরো কোম্পানি, একেবারে সমগ্র বিশ্ব!

হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। শুভ চোখ দুটো লেগে আসলো। সে আবার চেয়ারম্যান স্যারের অফিস রুমে যেয়ে ঢুকলো। কিন্তু উনি তো সেখানে অফিসে নাই। এই রুম, সেই রুম করে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো। নাহ কোথাও নাই। উনার সেক্রেটারি, এমডি, অফিসের কেউ কিছু বলতে পারল না। বেচারা হন্যে হয়ে ছুটতে লাগলো। উনাকে খুঁজে বের করতেই হবে। গান একেবারে ঠোটের গোঁড়ায় চলে এসেছে, সুর হয়ে বের হতে চাচ্ছে।

ঘুম ভাঙল সেলফোনের অ্যালার্মের শব্দে। লাফ দিয়ে উঠলো। তা হলে, সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। তার গান, চেয়ারম্যানের নাচ --কোনটাই আসল না। কিন্তু তার চাওয়াটা সত্যি, সে বলবে, চেয়ারম্যান স্যার সেই হিসেবে কাজ করবে। রিজিওনাল হেড কোয়ার্টার ঢাকায় পাঠিয়ে দিবে। শুভ সেখান থেকে এশিয়া ও আফ্রিকার মার্কেট কন্ট্রোল করবে। তার পরে দেখতে দেখতে পুরো কোম্পানির দায়িত্ব তার হাতে চলে আসবে। চেয়ারম্যানের সাহেবের বয়স হয়ে যাচ্ছে। তার বিশ্রামের অনেক দরকার।

শুভ নিজের উপর বিরক্ত হল। স্বপ্ন দেখে খুশী হওয়ার কিছু নাই। অবচেতন মন এই সব দেখিয়েছে। আর সে কিনা তাতেই খুশী হয়েছে। মনে এলো, সে রিমির সাথে কথা না বলে ফোন রেখে দিয়েছিল। ফোনটা নিয়ে কল দিল রিমিকে। না আগের মতই। সেই আগের মত অনেক বার রিং হওয়ার পরে রেকর্ডের ম্যাসেজ, ‘এখন লাইন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ ও না মুনশিগঞ্জ থেকে ফিরে এসেছে। তা হলে ফোন ধরছে না কেন? শুভ আরও কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেয়েটা কোথায় উধাও হল?

রিমি কতক্ষণ আগে ফোন করেছিল? ফোনের ইনকামিং কল লিস্ট দেখা আরম্ভ করল। কৈ সেখানে রিমির নামে কোন ইনকামিং কল দেখাচ্ছে না। তার মানে রিমি কল করে নি। বেচারা শুভ প্রাণ প্রিয় স্ত্রীর সাথে কোন যোগাযোগ ছাড়াই চতুর্থ দিনে প্রবেশ করলো। নতুন করে টেনশন আরম্ভ হল। মেয়েটা যে কেন একটা ফোন পর্যন্ত দিচ্ছে না। রিমি বললে সে চাকরি ছেড়ে দিতেও রাজী আছে। শুধু দু জনে হাত ধরাধরি করে, চোখে চোখ রেখে জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। তবে চেয়ারম্যান তার গানের তালে তালে নাচছে বিষয়টা হলে দারুণ হত!

শুভ সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াল। রেডি হয়েই ছুটতে হবে। সকাল সাড়ে সাতটায় মিটিং। রিমিকে খুঁজে পাওয়া ও চেয়ারম্যানকে নাচানো ---দুই-ই আপাতত স্বপ্ন হয়ে থাকল।

অক্টোবর ৮, ২০১৬

কাজী হাসান

প্রবাসী লেখকঃ quazih@yahoo.com

www.lekhalekhi.net