অবাক হয়ে মৃত্যু
পাশাপাশি দুটো কবর হয়েছে। একেবারে বলা যায় অল্প সময়ের ব্যবধানে। প্রথম কবরটা জন, আর দ্বিতীয়টা জেমসের। দু জনের প্রথম কথোপকথন এ ভাবে আরম্ভ হল …………
জেমসঃ জি আমি এখানে নতুন আসলাম। আমি আপনার নতুন প্রতিবেশী। আপনার পাশের কবরটাই আমার।
জনঃ আমাকেও নতুন বলতে পারেন। এইত আমি ঘণ্টা খানেক আগে এখানে রেখে গেল।
জেমসঃ কিছু যদি মনে না করেন, তা হলে কি জানতে পারি, আপনার মৃত্যুর কারণটা কি? আপনাকে দেখতে বেশ যুবক যুবক লাগছে।
জনঃ এইতো হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে গেল, তার থেকে মৃত্যু।
জেমসঃ কি ভীষণ দুঃখের কথা। এই গরম কালে আপনার ঠাণ্ডায় মৃত্যু হল? যাই হোক কপালের লিখন তো আর খণ্ডান যায় না।
জনঃ ঠিকই বলেছেন, কপালের লিখন আসলেও খণ্ডান যায় না। না হলে কি আর, বলা নেই, কওয়া নেই, এই ভাবে মৃত্যু হয়। তা ভাই, আপনিও দেখি আমারই বয়সের। আপনার ভাই এ রকম; ও সময়ে মৃত্যু হল কি করে?
জেমসঃ আর বলেন না ভাই। সে আরেক দুঃখের গল্প। আমার মৃত্যু হল অবাক হয়ে।
জনঃ আপনি তো ভাই বেজায় রসিক মানুষ। মৃত্যুর পরেও আপনার রস জ্ঞান দেখি একেবারে টসটসে আছে।
জেমসঃ আমি কোন রসিকতা করছি না। ঘটনাটা তা হলে খুলেই বলি। আমার স্ত্রী ছিল মহা সুন্দরী। তার কাছে, আমি বাসায় না থাকলে, যে অন্য পুরুষ আসত, তা একে বারে পরিষ্কার বুঝতাম। হাতে নাতে ধরার জন্য অফিস থেকে
না বলে চলে আসলাম। বাসার সামনের গাড়ি দেখলাম। দরজায় কান পেতে বউয়ের সাথে পুরুষ লোকের হাসাহাসি শুনলাম। দরজা খুলে ঘরে ঢুকে বউকেও পেলাম, একেবারে কাপড় ছাড়া মানে নগ্ন অবস্থায়। তার পড়ে খোঁজা আরম্ভ করলাম বদমায়েশ লম্পটটাকে। কিন্তু না বেটাকে কোথাও পেলাম না। বাথরুম, খাটের তলা, টেবিলের তলা থেকে আরম্ভ করে প্রতিটা জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। পঞ্চাশ বার করে প্রতিটা জায়গা খুঁজলাম। দুপুর ১২ টা থেকে রাত ১২ টা হয়ে গেল। কোথাও পেলাম না। বদমায়েশটা কোথাও নেই; একেবারে উধাও। অবাক হতে, হতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছে গেলাম, বেটা গেল কই? শেষে অবাক থেকে হার্ট এটাক। তার থেকেই, মাই ডিয়ার নিউ ফ্রেন্ড এন্ড নেইবার (প্রতিবেশী) , আমার মৃত্যু।
জনঃ ভাই জান, আপনার বাড়ির বড় ফ্রিজটা খুললেই কিন্তু আমারে পাইয়া যাইতেন।
বুঝলেন তো সবাই, শুধু ফ্রিজের দরজা খুলে না দেখার জন্যে; সরাসরি দুটো মৃত্যু। এক জন ঠাণ্ডায়, আরেক জনের অবাক থেকে হার্ট এটাক, আর তার থেকে মৃত্যু।
২
এক দেশে খুবই নাম করা এক রাজা ছিলেন। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া। চারি দিকে তার প্রচুর নাম ডাক। দেশের মানুষ প্রাণ দিয়ে উদয় অস্ত কাজ করছে। রাজ ভাণ্ডারে প্রচুর খাজনা জমা পড়ছে। রাজ্যের সব চেয়ে সুন্দরী মহিলা তার স্ত্রী, মানে রাজ রাণী। অন্য দেশের রাজারা সব তাকে হিংসে করে। সুন্দরী রাণী, বিশাল রাজ প্রাসাদ। তার পরে রাজা সাহেবের এত সম্পদ আর অর্থকড়ি।
রাজা সাহেবের ছিল সু যোগ্য, মহা করিৎ কর্মা এক মন্ত্রী। আসলে এক মাত্র রাজা সাহেবই জানতেন, দেশের সব কিছুই চলে মন্ত্রীর বুদ্ধিতে। সমস্যা যত সহজ, কিংবা জটিল হউক না কেন, তার মাথা থেকে সমাধান বের হতে কোন সময়ই লাগে না। এক পর্যায়ে দেখা গেল, রাজা সাহেব নিজে আর কোন কাজ করতেন না, সব কিছুই চলত মন্ত্রীর কথা মত।
রাজা সাহেবের বড় আস্থা ছিল মন্ত্রীর প্রতি। কাউকে না বললেও, খুব মেনে চলতেন মন্ত্রীকে। কোন কারণে যদি মন্ত্রী রাগ করে চাকরি ছেড়ে চলে যায়, তা হলে তার কি হবে? তবে এক দিকে দিয়ে তার স্বস্থি ছিল, মন্ত্রীর রাজ সিংহাসনের দিকে কোন দৃষ্টি ছিল না। না হলে তার মাথায় যে পরিমাণ বুদ্ধি, অনেক আগেই তাকে ল্যাং মেরে সরিয়ে দিতে পারত। কিন্তু সে এমন কাজ করার মানুষ না। সেই ছোট বেলার বন্ধু। রাজার অমঙ্গল হয়, সে রকম কাজ করবে না।
কিন্তু রাজা সাহেব বিশ্বস্থ সূত্রে যেই খবরটা পেলেন, তা নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। তিনি যখন রাজ প্রাসাদের বাইরে থাকেন, তখন মন্ত্রী অন্দর মহলে যেয়ে রাজ রাণীর সাথে সময় কাটায়। রাজা এক বার গোপনে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে, বেশ কিছুক্ষণ পরে পিছনের দরজা দিয়ে ফিরে আসলেন। যা শুনেছিলেন, সব মিলে গেল। তিনি মন্ত্রীকে রাণীর সাথে একেবারে অন্তরঙ্গ অবস্থায় পেলেন।
না , না এইটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এখন তাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি হলেন দেশের রাজা, আর বেটা ফাজিল মন্ত্রী কি না অন্দর মহলে হাত দিয়েছে। তার গর্দান নিতে হবে। মাথায় খেলল না। তার গর্দান নিলে, মন্ত্রিত্ব করবে কে? এত হাজার ধরণের সিদ্ধান্ত আর এত শত কাজ করবে কে? তিনি তো আসলে নামে রাজা। তা ছাড়া সিদ্ধান্ত না নিতে নিতে, মাথায় একেবারে জংপড়ে গেছে। মাথা থেকে কোন সিদ্ধান্ত বের হয় না।
মন্ত্রীর গর্দান নিলে দেশের সব কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাবে। রাজকোষে টাকা আসা কমে যাবে, হয়ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। লাফাঙ্গারটাকে মাথায় ঘোল ঢেলে দেশের থেকে বের করে দেয়া যেতে পারে। তাতে অবশ্য আরেক সব সমস্যা যোগ হবে। দেশের জনগণ সব গোপন কথা জেনে ফেলবে। তখন তাকে কেও বিশিষ্ট রাজা হিসেবে সম্মান করবে না। না, এইটাও বাতিল।
একের পর এক সিদ্ধান্ত তিনি বাতিল করে চললেন। অবশেষে, অনেক মাথা ঘামিয়ে তিনি ঠিক করলেন, রাজ প্রাসাদে কোন বিছানা থাকবে না। নিজের বুদ্ধিতে নিজেই আত্মহারা হলেন। সাপ মরল, লাঠিও ভাঙল না। শক্ত মেঝেতে তো আর সব কাজ করা যায় না।
৩
না এইটা আমাদের দেশের কথা হচ্ছে না।
আমাদের দেশ এর থেকে অনেক অন্য রকম!
এখানে, আইনের রক্ষকরা, ভক্ষকদের লালন পালন করেন। জনের মত কেউ ফ্রিজের মধ্যে ঠাণ্ডায়, আর জেমসের মত কেউ অবাক হয়ে মারা যায় না। সবারই সব কিছু জানা।
এখানে সাপ মরে না। লাঠি ভেঙ্গে যায়। র্যাব নিজের হাতে পয়সা নিয়ে মানুষ খুন করে।
আসলেও কি আমাদের দেশ এর থেকে অনেক অন্য রকম?
তবে অদৃষ্টের লিখন, বলে শোনা যায়, একটা কথা আছে!!
কাজী হাসান
ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪