বাঙালির নিজের নাক কাঁটা 

সৃষ্টি কর্তা মহা বিরক্ত মানব সমাজ নিয়ে। তিনি যা চেয়েছিলেন , তা মানুষরা করেনি। অনিয়ম আর হানা হানিতে ভরে গেছে তার এত শখের সৃষ্টি। তিনি সরাসরি ডেকে পাঠালেন এমেরিকা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আর বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীকে। সবাই বুঝলো প্রথম দুই দেশের প্রেসিডেন্টদের আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপরটা। শক্তিশালী দেশ , অনেকটা পৃথিবীর মোড়ল গোছের। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোটা পরিষ্কার হলো না। অনেক জল্পনা, কল্পনা চলতে লাগলো। তবে অনেকেই মনে করলো , যেহেতু  দুর্নীতি, অনিয়মে শীর্ষ স্থানীয় বাংলাদেশ, সৃষ্টি কর্তা  নিজে হয়ত প্রধান মন্ত্রীর সাথে বিশেষ কিছু  শতর্ক বাণী দিতে চান। 

সৃষ্টি কর্তা তিন নেতাকে সরাসরি বলে দিলেন , মানুষরা তার সব নির্দেশ অমান্য করে পৃথিবীকে একটা অনাবাসযোগ্য জায়গা করে তুলেছে। তিনি ঠিক তিন দিন পরে পৃথিবী ধংস করে দিবেন । নেতারা অনেক অনুনয় করেও তার মত পরিবর্তন করাতে ব্যর্থ হলেন।  তবে সৃষ্টিকর্তা বললেন, নেতারা চাইলে দেশের জনগনকে আসন্ন শেষ দিনের কথা আগেই জানিয়ে দিতে পারে।

এমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। বললেন, একটা ভালো আর একটা খারাপ খবর আছে । দেশের জনগণ সৃষ্টি কর্তা বিশ্বাস করেছে। তাকে তিনি নিজের চোখে দেখে এসেছেন। এর মধ্যে কোনো ফাঁকি নেই। সুতরং একে ভালো খবর বলতে হবে। খারাপ খবর হলো, সবার আয়ু বাকি আছে মাত্র আর তিন দিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জাতিকে জানালেন, দুটিই খারাপ খবর। তার বেশ কিছু দিন সৃষ্টি কর্তা বিশ্বাস  না করে ছিলেন , কিন্তু তিনি আছেন। আবার সবার মৃত্যু আর তিন দিনের মধ্যে। 

বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী দায়িত্ব দিলেন তার পুত্র "জ" কে দেশের মানুষকে খবরটা জানাতে।  সারা দেশের পারায়,মহল্লায় পোস্টারিং চলতে থাকলো। পল্টনের ময়দানে বিরাট জন সভার আয়োজন করা হলো। রেডিও, টিভি , ইন্টারনেটে সরাসির বক্তৃতা প্রচার হলো। "জ" বললেন, দুটোই ভালো খবর।  এক , দেশের জনগণ বিশ্বাস করতো পৃথিবী ধংস হয়ে যাবে। বাস্তবে তাই হচ্ছে। তিন দিনে মধ্যেই সবাইকে চির বিদায় নিতে হবে । আর দ্বিতীয় ভালো খবর হলো, অন্য "জ" র ক্ষমতায় আসা হবে না। তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। 

বাঙালী মানুষদের একটা অংশ , যে কোনো মূল্যে অন্যের ক্ষতি করতে পিছপা হন না । কিংবা চেষ্টা থাকে কোন ভাবে যাতে অন্যের যাতে ভাল না হয়।  আরেকটা ঘটনা বলি, দুই বন্ধু, ব্যবসায়ী। অনেক খাটা খাটনি করে ব্যবসাটাকে দাড় করালো । লাভের সাথে সাথে তাদের সন্দেহ বাড়তে লাগলো সমান তালে। দু জনেরই একই ধারণা। বন্ধু তাকে ঠকাচ্ছে । রেষারেষির এক পর্যায় তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। এখন তারা উকিল, আদালত করে সময় কাটায় । দেশের জমি জমা বিক্রি করতে হয়েছে , অন্য পক্ষকে জব্দ করতে।  কিছু দিনের মধ্যে দুই প্রিয় বন্ধুকে হয়তো, পথে পথে  থালা হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখা যাবে। 

বাঙালী দুই ভাই থাকত প্রবাসের এক শহরে। মোটামুটি চলে যাছিল । তাদের দু জনেরই বৈধ কাগজ পত্র ছিল না  বিদেশে থাকার। দেশের জমি জমা নিয়ে বিরোধ লাগলো। এক ভাই আরেক ভাইকে শায়েস্তা করার জন্যে কতৃপক্ষকে জানালো ভাইয়ের কাগজ পত্র না থাকার কথা। অন্য ভাইয়ের বুঝতে দেরী হলনা, কাজটি কে করেছে। সেও একই কাজ করলো। দু ভাইকে প্রথমে হাজতে কিছু দিন জামাই আদর করা হল। পরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হলো। লোক মুখে শোনা যায়, দুই ভাই জীবনের এখন একটাই লক্ষ। নিজের জান দিয়ে হলেও অন্য ভাইয়ের চূড়ান্ত ক্ষতিটা কি ভাবে করা যায়।  

অনেক জাতির মানুষকে সেবা করা তাদের সংস্কৃতির মধ্যে পরে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে কত না অজানা মানুষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের ঝড়, সাইক্লোনে শুধু বিদেশী সরকারগুলো আমাদের জন্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না, তাদের জনগণ আরো বেশিভাবে এগিয়ে আসে। পরাজিত পাক হানাদাররা চট্টগ্রামের বন্দরের সব মাইন পুতে গিয়েছিল। রাশানরা সে সময় এগিয়ে আসলো জায়গাটা মাইন মুক্ত করে দিতে। প্রান হারাল কিছু রুশ বাঙ্গালী জাতির সেবায়।  

অবশ্য আমাদের বাঙ্গালী জাতির মধ্যেও মানুষদের সেবা করার কিছু বিচ্ছিন্ন প্রমান পাওয়া যায়। হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তার সম্পত্তি দান করেছিলেন গরিবদের জন্যে। কিন্তু ব্যাপকভাবে মানুষকে সাহায্য, সেবা করার মানসিকতা আমাদের মধ্যে অনুপস্তিত। সবাই ধরে নেয়, অন্য কেও এগিয়ে আসবে। কিন্তু অনেক সময় সেই অন্য কেও, অন্য কেওই থেকে যায়। বঞ্চিত থাকতে হয় সাহায্য, সেবা প্রার্থী মানুষদের। 

আমরা আমাদের সামান্য স্বার্থ সিদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত। প্রয়োজনে অন্যকে ঠেকাতে আমরা প্রচুর মূল্য দিতেও প্রস্তুত। প্রয়োজনে নিজের নাক কেটে অন্যের ভালটা ঠেকাতে চাই। শেষে আরেকটা গল্প বলি । নরক পরিদির্শনে গেলেন বিশিষ্ট কিছু মানুষ। দেখা গেল, প্রতিটা জাতির জন্যে একটা করে কড়াই। তার মধ্যে টগবগে তেলের মধ্যে পাপী মানুষদের পুড়তে হচ্ছে। প্রতিটা জাতির কড়াইর পাশে একজন করে প্রহরী। মানুষ মাথা তুলে বের হওয়ার চেষ্টা করলেই মাথায় বিরাট এক লাঠির বারি। কিন্তু অবাক, বাঙালী জাতির কড়াইর পাশে কোনো প্রহরী নেই। পরিদর্শকরা ভাবলেন, বাঙালীরা নরকে এসে নিশ্চয়ই, অনিয়মের কোনো কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে। যাই হোক মন্দের ভালো। কিন্তু পরে জানা গেল, মাথা তুলে কোনো বাঙালী পালানোর চেষ্টা করলেই , অন্য বাঙালীই তার পা ধরে টেনে নামায় । সে জন্যে কোনো প্রহরী লাগে না।

০৬ মে ২০১১

www.lekhalekhi.net