body of water under full moon

ঘুটঘুটে অন্ধকার ও সাদা আলখাল্লা 

ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারিদিক একেবারে নির্জন। বিশাল এক জঙ্গলের ঠিক মাঝখানে কিছুটা খালি জায়গা। কেউ হয়তো সেখানকার গাছ-পালা কেটে ফেলেছে। তার ঠিক মাঝখানে আগুন জ্বলছে। দেখলে মনে হতে পারে বুঝি ক্যাম্প ফায়ারের আগুন। যারা স্কাউট জাম্বুরি করেছেন তারা দৃশ্যটার সাথে পরিচিত। রাতের বেলা আগুনের চারদিকে বসে স্কাউটের ছেলেরা বসে কিছু অনুষ্ঠান করে। কিন্তু এখানে আগুন জ্বললেও আশে-পাশে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণের যেতে না যেতেই মনে হলো পা চেপে চেপে কেউ একজন যেনো এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে একটা ছায়া মূর্তি দৃশ্যমান হলো।

লোকটার পরনে সাদা আলখাল্লা। আগুনের আলোয় এখন তাকে বেশ পরিষ্কারই দেখা যাচ্ছে। মুখটার দিকে তাকিয়েও চেহারাটা দেখা গেল না। সেটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। শুধু চোখের জায়গায় দু দিকে দুটো ও নাকের জন্য একটা ছিদ্র। বড় ও চোখা সাদা একটা টুপি কপাল থেকে আরম্ভ করে বেশ উঁচু হয়ে আছে। মনে হতে পারে সাদা একটা চোঙ উল্টো করে মাথায় দিয়েছে। পরনের আলখাল্লা বাতাসে সামান্য নড়লেও, টুপি একেবারে স্থির। হয়তো শক্ত কোনো ধাতু দিয়ে তৈরি। লোকটার হাঁটা-চলা কেমন যেনো চেনা লাগছে। 

রঞ্জন ঠিক বুঝতে পারছিল না লোকটার হাঁটার ধরণটা কেনো পরিচিত মনে হচ্ছে। ভালো করে স্মরণ করার চেষ্টা করল। হুমম। একটা ইংরেজি সিনেমার দৃশ্য সাই করে চোখের সামনে ভেসে উঠল। হু। লোকটার পোশাক পরিচ্ছদ একেবারে ইংরেজি সিনেমায় দেখেছে এমন কারোর সাথে মিলে যাচ্ছে। ছবিটাতে দেখেছিল আগুনের চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন লোক অস্পষ্ট শব্দে কি-সব মন্ত্র পড়েছিল। সেগুলো আর মনে এলো না। কিন্তু এখানে তো মাত্র একজন লোক আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে। নাহ, কিছুক্ষণের মধ্যে একই পোশাকের আরও একজন প্রথম-জনের পাশে এসে দাঁড়াল। রঞ্জন ওদের দেখে এবার দড় দড় করে ঘামতে লাগল। সে কিছুটা দূর থেকে গাছের আড়াল থেকে দেখছিল। তারপরেও শরীরের মধ্যে ভয় খেলে গেল। মেরুদণ্ড কেমন যেনো ঠাণ্ডা হয়ে উঠল। 

এখান থেকে সরে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু পা দুটো মনে হলো এর মধ্যে হাজার মণ ওজনের হয়ে গেছে। পা টিপে টিপে চলে যাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। পা উঠানোই যাচ্ছে না। এর মধ্যে লোকদুটো সুর করে কিছু একটা বলে চলল। রঞ্জনের মাথার মধ্যেই এলো না ওরা কি বলছে। হঠাৎই মনে এলো সিনেমায় এদের নাম ছিল ক্লু ক্লাক্স ক্ল্যান। কালো মানুষদের এরা সহ্য করতে পারে না। তারা শ্বেত আধিপত্যবাদী মতবাদে বিশ্বাসী। সুযোগ পেলেই কৃষ্ণাঙ্গদের অত্যাচার করে। খুন করতেও দ্বিধা করে না। ওদের বিশ্বাস শ্বেতকায় মানুষরাই শ্রেষ্ঠ। কিন্তু স্মৃতি রোমন্থন বেশিদূর এগুতে পারলো না। লোকগুলো তাদের মন্ত্র পড়া বন্ধ করে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কিছু একটা আলাপ করল। পরের মুহূর্তেই দু জনই তাদের আলখাল্লার ভিতর থেকে প্রায় একফুট লম্বা চকচকে ছুরি বের করে অনেকটা তলোয়ারের মতো করে উঁচু করে দাঁড়াল। 

রঞ্জন প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে লোকগুলোর কর্মকাণ্ডে দেখছে। ভাবছে এর পরে ওরা কি করবে। এবার তারা একটা ছুট দিলো। পরের ক্ষণই দেখল লোকগুলো রঞ্জনকে ঘিরে ফেলেছে। দু জন-ই চকচকে ছুরি চালাল রঞ্জনের উপর।

রঞ্জনের বয়স তখন দশ বছর। পাড়ার বাচ্চারা সব একসাথে পায়ে হেঁটে প্রাইমারি স্কুলে যেতো। সব মিলিয়ে চারজন ছেলে ও তিনজন মেয়ে একসাথে জড়ো হয়ে যাত্রা করতো। কেউ বাসার থেকে বের হতে দেরী হলে অন্যরা যেয়ে তাড়া দিতো। স্কুল শেষে আবার একইভাবে ফিরে আসতো। চলতি পথে মেলা কথা-বার্তা আর হাসা-হাসি চলতো। মাঝে ছোট একটা নদী ছিল। সেখানে একটা নৌকা তাদের জন্যে অপেক্ষা করতো। ছেলেমেয়েদের অভিভাবকেরা মাসিক ভিত্তিতে মাঝিকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতেন। বৃষ্টি হলে এদের যাতায়াতে বেশ সমস্যা হতো। সাথে ছাতা থাকলে অবশ্য কম ভিজতে হতো। তারপরেও কাঁধে কিংবা এক হাতে স্কুল ব্যাগ, অন্য হাতে ছাতা ধরে এগুতে যেয়ে ছোট ছোট হাতগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়তো। তারপরে কাঁদা এড়িয়ে নৌকায় উঠার ব্যাপারটা তো ছিলই। এই সাত জনের দলে সব মিলিয়ে দুটো ছাতা ছিল। যাদের ছাতা নাই তারাও ছাতার নিচে মাথা গলিয়ে শুকনো থাকার চেষ্টা করতো। 

সেইদিন সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিল। রঞ্জন ভাবছিল বৃষ্টি নামার আগে স্কুলে পৌঁছে যাবে। নদীর ওই পারে নৌকা থেকে নামার পর একটা অঘটন হলো। তখনও স্কুল পৌঁছতে মিনিট পনেরোর রাস্তা বাকি। একেবারে আকাশ ভেঙে তুমুল বৃষ্টি নামলো। এইদিকে দলের অন্য ছাতাটা থাকলেও, রঞ্জন তার ছাতাটা আনে নি। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মা বলেছিলেন সাথে ছাতাটা সাথে রাখতে। কিন্তু সেই মুহূর্ত ছাতাটা সাথে নিতে ইচ্ছা করে নি। এমনিতেই ব্যাগ ভর্তি বই-খাতা। তার পরে রঞ্জনের ব্যাক-প্যাক নাই। ব্যাগটা হাতে ঝুলিয়েই নিতে হয়। একটা হাত খালি থাকলে ব্যাগটা এক হাত থেকে অন্য হাতে দিয়ে প্রথম হাতটাকে বিশ্রাম দেয়া যায়। সাথে ছাতা থাকলে স্কুলে পৌঁছেও ঝামেলা; সেটা কোথায় রাখবে? এমনিতেই ক্লাস রুম ভর্তি টেবিল-চেয়ার। কোণার সামান্য খালি জায়গাতে আগে যারা আসে তারা বৃষ্টির পানি ঝরিয়ে ফেলার জন্যে ছাতা খুলে মেঝেতে রেখে দেয়। যারা ওখানে জায়গা করতে পারে না, তাদের ক্লাসের বাইরে ছাতা রাখতে হয়। স্কুলে এসে রঞ্জনের ছাতা নিয়ে এতো কসরত একদম পছন্দের না। 

এ ছাড়াও রঞ্জনের ছাতা নিতে না চাওয়ার আরেকটা কারণ আছে। দীর্ঘ ব্যবহারের কারণে ছাতার কাপড়ের একটা অংশে ছিদ্র হয়েছে। ভিতরের লোহার শলা আংটায় আটকে না থেকে কিছুক্ষণ পর পর নেমে আসে। ফলে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা খোলা রাখতে রঞ্জনের বেশ বেগ পোহাতে হয়। তার থেকে বরং দৌড়ে স্কুলে পৌঁছতে পারলেই ভালো। কিছুটা ভিজলেও তেমন সমস্যা নাই। এতো ঝামেলাও পোহাতে হয় না, ছিঁড়া ছাতার জন্যে সহপাঠীদের বিদ্রূপের হাসিও সহ্য করতে হয় না।

বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। পথের তুমুল বৃষ্টিতে রঞ্জন একেবারে ভিজে জবজবে হয়ে গেল। সেইটা অবশ্য বড় সমস্যা ছিল না। মাথা মুছে ফেললো শরীরের বাকী অংশ এমনিতেই শুকিয়ে যাবে। স্কুল শেষ হতে হতে বৃষ্টি নিশ্চয়ই বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ধীরে-সুস্থে বাড়ি ফিরলেই হবে। কিন্তু দৌড় দিতে যেয়ে কয়েক কদম এগুনোর পর বেচারার গর্তে পা পড়ে গেল। গর্তটা বৃষ্টির পানিতে আগের থেকেই ভরা ছিল। এ জন্য রঞ্জন দেখতে পায় নি। আর যায় কই? পা পিছলে অসহায় বালকটা পড়ে গেল। সারা শরীরে কাদা মেখে একাকার। পরের মুহূর্তে সে উঠে দাঁড়াল। কনুইয়ের কাছে চামড়া ছিলে যেয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পা’ও মনে হয় মচকে গেছে। বেশ ব্যথা আরম্ভ হলো। সে সিদ্ধান্ত নিলো, নাহ এইভাবে স্কুলে যাওয়াটা ঠিক হবে না। 

রঞ্জন বৃষ্টির মধ্যেই বাসায় ফিরল। অবশ্য কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি কমে গিয়েছিল। সে বাড়ির ভিতর যখন পা রাখল তখন মা’ই তাকে প্রথম দেখলেন। সাথে সাথেই তিনি আর্ত-চিৎকার দিয়ে বাড়ির সবাইকে এক জায়গায় করলেন। রঞ্জনের শরীরে কাদামাটি লেগে একেবারে ভয়াবহ দেখাচ্ছিল। সাথে কনুই’র কাছ থেকে বেশ রক্তও বের হচ্ছিল। মা বাড়ির উঠানেই পরিষ্কার পানি আনালেন। ভিতর থেকে ফ্রেস কাপড় এনে দেয়া হলো। এইদিকে রঞ্জনের বাবা রহমত মোল্লাকে বৃষ্টির জন্যে দিনের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়েছিল।। গঞ্জে কোর্টের তারিখ ছিল। সেটাও আবার নদীর ওপাড়ে। জমি-জমা নিয়ে মেলা দিন ধরে ঝামেলা চলছে। এখন কিছুদিন পর পর কোর্টে ডাক পড়ছে। সেইজন্য উকিলের পিছনে প্রচুর টাকা ঢালতে হচ্ছে। তিনি বিষয়টা ছেড়ে দিতে পারছেন না। আবার আশায় আশায় এর মধ্যে মেলা খরচ করে ফেলেছেন। আজ সারাদিন রাইস মিলে কর্মচারী সিদ্দিকের একা কাজ করার কথা। সে আবার সুযোগ পেলেই হিসাবে উল্টা-পাল্টা করে ফেলে। এত সব কারণে মেজাজ তুমুল তিতিয়ে ছিল। তিনি রিকশা নিয়ে ঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বাজারে কলিমুদ্দিনের দোকানে থেমেছিলেন। সেখানেই খবর পেলেন যে তার উকিল খবর পাঠিয়েছেন জজ সাহেব অসুস্থ। আজকে তিনি এজলাসে বসবেন না। উকিল সাহেবের না-কি রহমত মোল্লার মোবাইল নম্বর সেভ করেন নি। আর ফাইল দেখে নম্বর খোঁজা সম্ভব হয় নি। তাই তিনি দোকানে খবর দিয়ে রেখেছেন। 

রহমত মোল্লা যেই রিকশা নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলেন, সেটা নিয়ে ফিরে এলেন। তাকে অসময়ে ফিরে আসতে দেখে স্ত্রী রহিমা বেশ অবাকই হলেন। রিকশায় করে আসা যাওয়া করলেও তার জামা-কাপড়ও কিছুটা ভিজেছে। জুতায় কাদা লেগে গিয়েছিল। তিনি কাপড় পাল্টে এসে স্ত্রীকে বললেন এক কাপ চা দিতে। তখনই তিনি শুনলেন রঞ্জনের খবর। গত সপ্তাহেও রঞ্জন দুই দিন স্কুলে যায় নি। হেড মাষ্টার সাহেব নিজে রাইস মিলে এসে খবরটা দিয়ে গিয়েছিলেন, “বুঝলেন তো এই বয়সে ছেলেদের চোখে চোখে রাখতে হয়। না হলে বখে গেলে আর কিছু করার থাকবে না।” বাসায় এসে স্ত্রীকে বিষয়টা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। উত্তর পেয়েছিলেন ছেলের গায়ে হালকা জ্বর ছিল। সে জন্য যায় নি। রহমত মোল্লার উত্তরটা পছন্দের হয় নি। মনে হয়েছিল, মা হয়তো ছেলের কোনো ব্যাপার গোপন করছে। পরে বিষয়টা মাথার থেকে বেমালুম চলে গিয়েছিল। 

ছেলেকে সাথে সাথেই জোর গলায় ডাকলেন। সে তখন মাত্র বিছানায় ব্যথার ছোট্ট শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে। বেচারা কষ্ট করে উঠে বাবার সামনে যেয়ে দাঁড়াল। মোল্লা সাহেব রঞ্জনকে দেখা মাত্রই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বেশ অনেকক্ষণ ধরে সজোরে উত্তম-মধ্যম করলেন। রহিমা ওই দিকে রান্না-ঘরে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি শব্দ শুনে ছুটে এসে অনেক কষ্টে ছেলেকে বাবাকে মারধোর খাওয়া থেকে উদ্ধার করলেন। কিন্তু রহমত মোল্লা তখনও রাগে গর্জাচ্ছেন, “ও যদি আবার স্কুল ফাঁকি দেয়, তা হলে ওকে আমি ঘর থেকে বের করে দিবো।” 

ঘণ্টা দু’য়ে-কের মধ্যে রঞ্জনের আকাশ পাতাল জ্বর এলো। চুপ করে থাকতে চাইছিল। কিন্তু গলার থেকে গো গো শব্দ এমনিতেই বের হয়ে আসতে লাগল। একবার মনে হয় সে মা মা করে ডেকে উঠলো। মা হয়তো ছুটে এলেন। তিনি এসে কপালে জলপট্টি দিতে লাগলেন। এইভাবে যে কতটুকু সময় পার হলো সেটা আর রঞ্জন মনে করতে পারলো না। কিন্তু বুঝল শরীরটা ভীষণ হালকা হয়ে যাচ্ছে। চাইলে সে এখন উড়তে পারবে। 

রঞ্জনের প্রায় চার ঘণ্টা অজ্ঞান ছিল। হুশ যখন এলো তখন বাড়ি ভর্তি মানুষ। মহিলাদের নিচু গলায় কান্না-কাটিও শোনা যাচ্ছিল। এলাকার একমাত্র ডাক্তার সাহেব ছুটি নিয়ে শহরে গেছেন। তার সহকারী মানে কম্পাউন্ডার বলে গেছেন এই ছেলের হুশ ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে একবার হাসপাতালে নিয়ে দেখিয়ে আনতে পারলে ভালো হয়। ওরা যদি কিছু করতে পারে! রঞ্জনকে হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হলো। কিন্তু বৃষ্টি আবার নতুন করে আরম্ভ হয়েছে। রিকশা ভ্যানে করে নেয়া হলে ছেলেটা ভিজে আবার যবযবে হয়ে যাবে। শেষে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। 

রঞ্জন কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল। এর মধ্যে সবার কিছুটা স্বস্তি। যাই হোক সবাই যে ভয়টা পেয়েছিল, সে রকম কিছু তো হয় নি। তারপরেও রহমত মোল্লা জানিয়ে রাখলেন সকাল হলেই তিনি ছেলেকে নিয়ে উপজেলার হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। তিনি উদ্বিগ্ন হলেন এই ভেবে যে একমাত্র পুত্রের শরীরে কোনো রোগ বাসা বাঁধে নি তো! না হলে এতক্ষণ ছেলেটা বেহুশ ছিল কেনো? তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন প্রয়োজনে রঞ্জনকে ঢাকায় নিয়ে যাবেন। সাধ্যে কুলালে যা যা দরকার সবই করবেন।

রঞ্জনের ভোর রাতের দিকের ঘুম ভাঙল। তার রুমে এখন আর কেউ নাই। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একটু পানি পেলে ভালো হতো। সাথে বাথরুমে যাবার দরকার হয়ে পড়েছে। বিছানার পাশে টেবিলে এক গ্লাস পানি রাখা ছিল। অনেক চেষ্টা করেও বিছানা থেকে উঠতে পারল না। গলার থেকে স্বর পর্যন্ত বের হলো না। অসুস্থ শরীরে ভাবতে লাগলো এখন কি করা যায়। 

হঠাৎ জানালা খোলার শব্দ পেলো। রঞ্জন দেখল বাইরের থেকে ধাক্কা দিয়ে কেউ জানালা খুলে ফেলল। বৃষ্টি থেমে গেছে তবে দিনের আলো এখনও ফুটে নি। সে বুঝার চেষ্টা করলো বিষয়টা কি। চোর কি জানালা দিয়ে ঢুকার চেষ্টা করছে? এবার দু জন সাদা আলখাল্লা পরা মানুষ দেখতে পেলো। ওরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা ভালো করে বুঝা গেল না। কিন্তু দু জন নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করে আলাপ করে আলখাল্লার ভিতর থেকে চকচকে ছুরি বের করে হাতে নিলো।

রঞ্জন ভাবল জানালার বাইরে থেকে ছুরি দিয়ে লোক দুটো আর কি-ই বা করতে করবে। জানালা ভেঙে ঢুকতে গেলে শব্দ হবে; বাড়ির লোকজন ছুটে আসবে। কিন্তু কি অদ্ভুত ওদের হাত দুটো লম্বা হয়ে জানালার ভিতর দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। মুহূর্তেই ছুরি ওয়ালা হাত দুটো ঠিক তার বুকের কাছে চলে এলো। এখনই তার বুকে আঘাত করবে। রঞ্জন শরীরের পুরো শক্তি এক করে চিৎকার করতে চেষ্টা করলো। নাহ গলার থেকে কোনো আওয়াজ বের হলো না।

রঞ্জন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে পড়ালেখা করতে ঢাকায় চলে এলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে জায়গা না পেয়ে মেসে স্থান করে নিলো। সেখানে এক রুমে তিনটা খাট পাতা। অন্য দু জনও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। তবে তারা ছাত্র না কর্মচারী। সাদেক ও জব্বার একই এলাকার মানুষ। রঞ্জন রেজিস্টার অফিসে ভর্তির কাজে গিয়েছিল। জব্বার তাকে চিনে ফেলে জানতে চায়, “আরে তুমি রহমত চাচার ছেলে না?” রঞ্জন পরিচিত একজন মানুষ পেয়ে অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচল। ঢাকায় তেমন কারোর সাথে পরিচয় নাই। কলাবাগানে এক দূর সম্পর্কে খালার বাসায় উঠেছিল। কথা ছিল ক্লাস আরম্ভ হওয়ার আগে সে হোস্টেলে যেয়ে উঠবে। কিন্তু আপাতত সিট খালি না থাকাতে সে মহাচিন্তায় পড়েছিল। এলাকার মানুষ পেয়ে রঞ্জন এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলল। সে অভয় দিলো ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে। খরচপত্র তেমন বেশী হবে না। বলতে গেলে হোস্টেলের মতোই। 

দু দিন পরে রঞ্জন বিছানা-পত্র ও জামাকাপড় নিয়ে মেসে চলে এলো। সাদেকের সাথে পরিচয় হলো। দু জনই প্রায় রঞ্জন থেকে বছর দশেকের বড়। কিন্তু অন্তরঙ্গতা হতে সময় লাগল না। তারাও একই স্কুল ও কলেজ থেকে পড়ালেখা করেছে। তখন কি হতো আর বর্তমানে কী হচ্ছে ধরণের মেলা কথাবার্তা চলতে গেল। তুলনা চলতো কখন ভালো ছিল। রঞ্জনের ধারণা হলো দু জন ই তাকে অনেক স্নেহ করে। সময় ও সুযোগ পেলে ওদের সাথে বাইরে বের হওয়া আরম্ভ করল। প্রথম দিকে হয় সাদেক কিংবা জব্বারের সাথে কাঁচা বাজার করতে যেতো। কিন্তু মাস খানেকের মাথায় বড় ভাই দু জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে অদ্ভুত এক জায়গায় নিয়ে গেল। সেখানে শুধু আলোর ঝলকানি ও পয়সার ঝনঝনানির শব্দ। 

জব্বার বেশ আগ্রহ নিয়েই রঞ্জনকে স্লট মেশিন চিনিয়েছিল। দেখিয়ে দিলো মেশিনের হ্যান্ডেল টেনে ছেড়ে দিলো কিভাবে চাকতি ঘুরতে থাকে। চাকতি থামার পর মেশিনের ছবিগুলো মিলে গেলেই জ্যাক পট। তার মানে ঝন ঝন করে একগাদা টাকা জেতা যাবে। পোকার, জোকার সহ তাস দিয়ে আরও নানা ধরণের খেলা আছে। নিয়মিত খেললে আবার বড় বড় বাজির খেলার সুযোগ দেয়। সেখানে আবার লেগে গেলেই একেবারে আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার অবস্থা। জব্বার রঞ্জনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমিও একবার ৫০ হাজার টাকা জিতেছি।” রঞ্জনের মুখ থেকে জব্বারের শেষের কথাগুলো নিজের থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরাবৃত্তি হলো, “৫০ হা জা র!” 

গ্রামের কিছু বখাটে ছেলে ক্যারাম আর তাস দিয়ে টাকা বাজি ধরতো। রঞ্জন কয়েকবার পাশে দাঁড়িয়ে ওদের খেলে দেখেছে। সেখানে বাজি হতো অল্প কিছু টাকার। সেই জন্যে জেতার পরিমাণ ছিল কম। কয়েকজন আবার সারাদিন ধরে খেলে চলতো। রঞ্জন ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছে এই সব খেলা হলো জুয়া। মানুষ প্রথমে কিছু জিতলেও শেষে সর্ব-শান্ত হয়। মসজিদের ইমাম সাহেব মেলা বার বলেছেন টাকা বাজি ধরে খেলল কবিরা গুনাহ হয়। এর কোনো মাফ নাই। একেবারে নিশ্চিত জাহান্নামের আগুন। তা ছাড়া বাড়ির থেকেও কঠিনভাবে বলা ছিল বখাটে ছেলেদের আসে পাশে না ভিড়তে। তারপরেও কিছুটা কৌতূহল বশে খেলাগুলো বুঝতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু খেলার উৎসাহ কিংবা সাহস কোনটাই হয়নি। 

অবশ্য ব্যতিক্রম একবার হয়েছিল। রঞ্জন তখন ক্লাস টেনে উঠেছে। স্কুলে যাওয়া, কোচিং ও বাসায় পড়ালেখা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। হাতে বাড়তি সময় নাই বললেই চলে। এর মধ্য সমবয়সী কয়েকজন পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। তাদের হাতে মেলা সময়। কয়েকজন বাবাদের কাজে-কর্মে সাহায্য করা আরম্ভ করল। অন্যরা চায়ের দোকানের সামনে বসে জটলা করতো। সুযোগ পেলে ক্যারাম, তাসের জুয়ার আসরে যোগদান করতো। এ রকমই একজন ছিল মানিক। একদিন সকালে রঞ্জন থেকে পাঁচ টাকা ধার নিলো। বিকাল বেলা দশ টাকা হাতে গুজে বলল, “তোর পাঁচ টাকাটা দারুণ ‘লাকি’ ছিল। ওইটাকে আমি পঞ্চাশ টাকা বানিয়েছি। তার থেকে তোর লাভের টাকা যোগ করে দশ টাকা মানে ডবল করে ফেরত দিচ্ছি।” রঞ্জন খুবই অবাক হলো। এতো সহজে ও এতো তাড়াতাড়ি তা হলে পাঁচ টাকাকে পঞ্চাশ টাকা বানিয়ে ফেলা যায়! একবার মনে হলো নিজে যেয়ে চেষ্টা করে দেখলে কেমন হয়। পুরো টাকাটাই তা হলে তার নিজের হবে। 

অনেকটা কৌতূহল নিয়ে ক্যারাম খেলার জায়গায় গিয়েছিল। সাথে বিশ টাকা নিয়েছিল। পরিকল্পনা করে ফেলেছিল যে সে কত টাকা নিয়ে ফিরবে আর সেটা দিয়ে কি করবে। ৫ টাকা যদি ৫০ টাকা হয়ে যায়, তা হলে ২০ টাকা দু শো টাকা হবে। নিদেনপক্ষে শ দেড়েক টাকা হলেও সারবে। পুরো বিশ টাকা দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে চা আর সিঙ্গারা খাবে। বাকী টাকা নিয়ে বাজারে যাবে। গত সপ্তাহে সলিমুদ্দিন গার্মেন্টস স্টোরে একটা জিনসের জ্যাকেট এসেছে। মনে হচ্ছে বিদেশী কোনো ব্র্যান্ডের। এর মধ্যে কয়েকবার সেটা দেখে এসেছে। একবার পরেও দেখেছে। বেশ সুন্দর ফিট করেছিল। এইটা গায়ে থাকলে বন্ধুদের একেবারে তাক লাগিয়ে দেয়া যাবে। বাবাকে বললে হয়তো কিনে দিতেন। কিন্তু বাবার মনটা তেমন ভালো যাচ্ছে না। চাল ভাঙানোর মেশিনটা প্রায় ঝামেলা দিচ্ছে। সেটা মেরামত করতে বারবার মিস্ত্রি ডাকতে হচ্ছে। বাবার ভাষ্য অকারণে গাদা গাদা টাকা বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু না যা ভেবেছিল তার কিছুই হলো না। দশ মিনিটের মধ্যে রঞ্জন বিশ টাকা হেরে বসল। মুখ কালো করে যখন মানিকের দিকে তাকাল, তখন সে বলল, “ভাগ্যে না থাকলে টাকা জেতা যায় না। মাঝে মধ্যে এরকমই হয়। পকেটের সব টাকাই অন্যের কাছে চলে যায়।”

এই কয় বছরে এলাকায় প্রচুর উন্নতি হয়েছে। নদীর উপরে ব্রিজ তৈরি হয়েছে। নদীর এই পাড়েই তিনটা প্রাইমারি এবং একটা ছেলেদের ও একটা মেয়েদের হাই স্কুল চালু হয়েছে। রঞ্জনের ইচ্ছা ইচ্ছা ছিল আগামীকালই জ্যাকেটটা পরে সূর্যমুখী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে হেঁটে যাবে। এর মধ্যে কয়েকজন সমবয়স্কদের বান্ধবী জুটে গেছে। সেই বা ওদের থেকে কম কিসে? তারপরে ফিটফাট হয়ে চললে তো সুন্দরীদের চোখে পড়তে বেশী সময় লাগার কথা না। বাবার একটা সান গ্লাস আছে। ঢাকা থেকে কেনা। কিন্তু তিনি সেটা ব্যবহার করেন না। সব সময় আড়াই পাওয়ারের সাদা চশমা ব্যবহার করেন। চশমাটা সে বাবার থেকে চেয়েই নিবে। বাবার এখানে না বলার কোনো সম্ভাবনা নাই। বেশ কিছুদিন ধরেই মাথায় এগুলো খেলছিল। এখন প্ল্যানটা একেবারে মাঠে মারা পড়ল। রঞ্জনের মেজাজ খারাপ হতে লাগল। মনে হলো পৃথিবীর কোনো কিছুই তার চাওয়া অনুযায়ী হয় না। সব বন্ধুদের বান্ধবী জুটে যাবে। তাকে একাই হয়তো বাকি জীবন মাথা নিচু করে চলতে হবে। কিশোর মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। মনে হলো মাথা ঘুরছে, পা ভারী হয়ে আসছে। পা টেনে টেনে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো। কিন্তু শরীরকে আর সামাল দিতে পারল না। উঠানে যেয়ে পড়ে গেল। মা চিৎকার করে ছুটে এলেন।

জ্ঞান যখন ফিরল তখন দেখল তাকে একজন পরীক্ষা করছেন। তিনি বাবাকে বললেন, “ছেলের গায়ে অনেক জ্বর উঠেছে। ম্যানিনজাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ওষুধ দিচ্ছি। এত পরেও জ্বর না কমলে হাসপাতালে নিতে হবে।” রঞ্জন কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখল কালো আলখাল্লা পরা একজন মানুষ ছুরি হাতে তার দিকে ছুটে আসছে। সে বুঝল না এইটা কি বাস্তব না কি স্বপ্ন। তার দিকে ছুরি নিয়ে ধেয়া আসার কোনো কারণ থাকতে পারে না। সে কি কোনো সিরিয়াল কিলারের পাল্লায় পড়েছে? রঞ্জন চিৎকার করে বলতে চাইলো, বাঁচাও। কিন্তু কি অদ্ভুত। গলার থেকে একটুও শব্দ বের হলো না। এখন কি তাকে খুন করে ফেলবে?

রঞ্জন এলাকার দু বড় ভাই জব্বার, সাদেকের সাথে সপ্তাহে দু তিন দিন ক্যাসিনোতে যাওয়া আরম্ভ করল। ঢাকা শহরে যে এতোগুলো ক্যাসিনো থাকতে পারে সেটা সম্ভবত কারোর জানা ছিল না। প্রথমে দর্শক হলেও পরে নিজেই খেলা আরম্ভ করল। অল্প টাকার বাজি ধরে বেশ ভালো ফল পেলো। সাদেকের আবার দক্ষতা বেশী। প্রায়ই সে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরে। সেই রঞ্জনকে সাবধান করে দিয়েছিল, “খবরদার বেশী টাকার বাজি ধরবে না। আগে খেলাগুলোতে হাত পাকাও; তার পরে বড় বাজি ধরো। না হলে কিন্তু সর্ব শান্ত হয়ে যেতে হবে।” রঞ্জন উপদেশটা বেশ ভালো ভাবেই মাথায় ঢুকিয়েছিল। একবারে দশ টাকার বেশী দিয়ে সে খেলতোই না। হারজিত চলতে থাকলেও সে বেশ কয়েকটা বিষয় বুঝে ফেলল। 

টাকা জিততে হলে কিছুটা ভাগ্যের অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার থেকে বেশী জরুরী বোর্ড গেমে ক্যাসিনোর এজেন্ট (কর্মচারী) কিভাবে গুটি চালছে এবং কোন প্রক্রিয়ায় অন্যদের ঘায়েল করছে। মোট কথা অন্যদের কৌশল ধরে পাল্টা কৌশল প্রয়োগ করতে পারলেই জয়। মানে বাজির টাকা বাড়তে থাকবে। কিন্তু একটু উনিশ-বিশ হলেই মহা বিপদ। সাথের সব টাকা বের হয়ে যাবে। সতর্ক না হওয়ার জন্যে কত মানুষ যে পথে বসেছে তার কোনো ইয়ত্তা নাই। দুই গুরু জব্বার ও সাদেক রঞ্জনকে এক এক করে সব দীক্ষাই দিলো। পুরো একমাস চলল প্রশিক্ষণ চলল। গুরুরা আগেই জানিয়ে রেখেছিল, তারা যখন মনে করবে রঞ্জন বড় বাজি ধরতে প্রস্তুত তখন তারাই জানাবে। দু জনের আগ্রহ ও তত্ত্বাবধান রঞ্জনকে দারুণভাবে মুগ্ধ করলো। মাঝে কয়েকবার জব্বার ও সাদেক পালা করে রঞ্জনের পক্ষে খেলে টাকা জিতল। লাভের পুরোটাই রঞ্জনকে দিয়ে দিলো। সে অবশ্য ভাগাভাগি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওদের একই কথা, “তুমি ছাত্র, আয় করো না। তোমার টাকা পয়সার আরও বেশী দরকার।” 

এইদিকে রঞ্জনের আর তর সয় না। কবে যে তারা বলবে তার সব কৌশল শেখা হয়ে গেছে। এখন সে নিজেই বড় বাজিতে খেলতে পারবে। প্রথমে সে আশা করেছিল, এই কয়টা কৌশল শিখতে আর কতদিন লাগবে? ক্যাসিনো থেকে ভালো উপার্জন আসতে থাকলে বাবার থেকে আর টাকা নিবে না। বেচারার ধান ভাঙার মেশিন খুব একটা ভালো চলছে না। আশে পাশে কম্পিটিশন এসে গেছে। তাদের সব নতুন মেশিন। তাদের রেট কম। আবার মেশিনগুলো অনেক দ্রুত কাজ করে। সব কিছু ভেবে ঠিক করেছেন তিনি তার ব্যবসা বিক্রি করে দিবেন। রঞ্জন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলেই তিনি অবসরে যাবেন। তার কথা বার্তায় এখন শুধু হতাশার সুর। এর মধ্যে রঞ্জন বাবাকে জানাল, তার একটা পার্ট টাইম চাকরির অফার এসেছে। মাস খানেকের মধ্যে বেতন পাওয়া আরম্ভ করবে। অল্প কিছু টাকা পাঠালেই চলবে। সে আশা করছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে আর টাকা পাঠাতে হবে না। বরং সেই বাড়িতে টাকা পাঠাবে। ছেলের কথা শুনে বাবার মন ভরে গেল। তিনি তা হলে একজন যোগ্য ছেলে মানুষ করেছেন। অনেকের ছেলে পড়ালেখা শেষ করেও বেকার থাকে। আর তার ছেলে ছাত্র অবস্থায় আয় করে শুধু নিজের খরচ না সংসারেও হাল ধরতে চাইছে। 

শেষে মাহেন্দ্রক্ষণ এলো। প্রায় দু মাস পরে রঞ্জন দু গুরুর আশীর্বাদ নিয়ে ক্যাসিনোতে ২০ টাকা দিয়ে বাজি ধরলো। খেলা শেষে ব যাওয়ার আগে পকেট থেকে টাকা গুণে দেখল ২০ টাকা দুশো টাকা হয়ে গেছে। ক্লাস টেনেরর সেই ঘটনা মনে এলো। সে তখন আজকের দিনটাকে আশা করেছিল। সেবার সে কতই না মন খারাপ করেছিল। সেটা যাক। মনে মনে হিসেব করে ফেলল, দিনে দুশো টাকা আসলে মাসে হবে ছ হাজার টাকা। তবে হয়তো প্রতি সন্ধ্যায় আসা নাও হতে পারে। পড়ালেখা চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তা হলে সন্ধ্যায় পড়ালেখা করতে হবে। সে জন্যে হিসেবে কিছু পরিবর্তন আনল। ২০০ টাকাকে ৩০ না ২০ দিয়ে গুণ করলো। তা হলে হয় চার হাজার টাকা। প্রথম কয়েক মাস এতেই খুশি থাকতে হবে। গুরুরা সাবধান করে দিয়েছে, “খবরদার বাসার থেকে ২০ টাকা বেশী নিয়ে বের হবে না।” 

দেখতে দেখতে আরও ছয় মাস কেটে গেল। তিনজনই সন্ধ্যা হলে ক্যাসিনোতে না যেয়ে পারে না। নেশার টান আর কি সহজে অমান্য করা যায়? রঞ্জন এখন পকেটে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে বের হওয়ার অনুমতি পেয়েছে। তবে প্রতিবার যে জিতে আসে তা কিন্তু না। গতমাসে মোট আটবার সবগুলো টাকা হেরে এসেছে। কিন্তু বড় একটা সান্ত্বনা আছে। একবার পুরো ন হাজার টাকা জিতে ফিরেছিল। সেদিন রঞ্জনের আনন্দ আর উল্লাস আর দেখে কে? যদিও সাদেক বেশ ধীর ও গম্ভীর গলায় বলেছিল, “এতো খুশী হওয়ার কিছু নাই। এখানে জেতা যেমন সহজে যায়, তার থেকে বেশী সহজে হেরে সর্বশান্ত হওয়া যায়।”

ছুটির দিনগুলোতে তিনজনের প্রচুর আড্ডা হতো। রঞ্জনের মুহূর্তের জন্যেও মনে হয় না সে অন্য দুজনের তুলনায় বয়সে অনেক ছোট। ওরা প্রচুর দুষ্টুমির কথা বললেও আলোচনার মূল বিষয়বস্তু থাকে ক্যাসিনো থেকে কিভাবে আরও বেশী টাকা নিয়মিতভাবে জেতা যায়। ওরা এ পর্যন্ত বহু মানুষকেই কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যেতে দেখেছে। ওরা যতই কৌশলই জানুক না কেন, ডিলাররা এমনভাবে খেলা পরিচালনা করে যে শেষে তারাই এক বিজয়ী হয়। অন্য খেলোয়াড়রা জিতে কিন্তু ক্যাসিনো কোম্পানি যে পরিমাণ টাকা নিজেরা নিয়ে নেয়, তার সাথে তুলনা করলে অন্যদের জেতা টাকার পরিমাণ একেবারেই নস্যি। এইসব ক্যাসিনোগুলোর মালিকরা সব দেশের হর্তাকর্তা। তারা দেদার টাকা তুলে নিচ্ছে। জব্বার কয়েকজন প্রতাপশালীর নাম উল্লেখ করে বলল,“"এদের রাজনীতির বড় বড় জায়গায় যোগাযোগ আছে। লোকে বলে পুলিশে এদের কর্মকাণ্ডে জানে, কিন্তু কিছু বলার সাহস পায় না।” 

এইভাবেই চলছিল দিন। ইতিমধ্যে রঞ্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। ওদের মধ্যে বাজি ধরার উৎসাহ আগের থেকে কমে গেছে। জব্বার, সাদেক এর মধ্যে দেশের থেকে জমি বিক্রির টাকা এনে ক্যাসিনোতে হেরেছে। সারাক্ষণ তারা বিরক্ত হয়ে বসে থাকে। ক্ষোভ করে বলে ‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’। আবার প্রায়ই তারা দু জনে নিজেদের মধ্যে নিচু গলায় শলা পরামর্শ করে। রঞ্জন কাছে এলে ওরা চুপ করে যায়। বিষয়টা নিয়ে রঞ্জন ভেবেছে জিজ্ঞাসা করবে। পরে মনে হয়েছে ওরা যেহেতু নিজের থেকে বলছে না; নিজের থেকে জানতে চাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে হঠাৎ ওদের আচরণের এমন পরিবর্তন ঠিক মাথার মধ্যে এলো না। সে জানে দু জনেই ক্যাসিনোতে বড় অঙ্কের টাকা হেরেছে। আসলে রঞ্জনের কাছে বাজি ধরার বিষয়ে নিজেদের বড় বিশেষজ্ঞ প্রমাণ করলেও, ওরাও খেলা আরম্ভ করেছিল করেছিল রঞ্জনকে মেসে আনার তিন মাস আগের থেকে। বেশ কিছু টাকা জিতে তারা বিশাল স্বপ্ন দেখা আরম্ভ করেছিল। কিন্তু এখন সব ধূলিসাৎ। 

পর পর জব্বার ও সাদেকের ক্যাসিনোতে হারের আগে তিনজনের সময় ভালোই কাটছিল। নিদেনপক্ষে একজনের হলেও পকেটে কিছু টাকা থাকত। রেস্টুরেন্টে বসে পরাটা, মাংস, কাবাব খেতো আর খোস মেজাজে নানান গল্প করতো। এই গল্প সেই গল্প করতে করতে রঞ্জন ওদের বলল, সে বেশ কয়েকবার স্পষ্ট দেখেছে সাদা পোশাক পরা মানুষরা তাকে চকচকে ছুরি নিয়ে খুন করতে আসছে। সে চাইলেও তখন গলার থেকে কোন আওয়াজ বের করতে পারে না। সবাই বলে এগুলো স্বপ্ন। কিন্তু সে মানুষগুলোকে স্পষ্ট দেখে। তারা শরীরের খুব কাছে চলে আসে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ছুরি না চালিয়ে ফিরে যায়। তবে তারা যখন খুন করতে আসে ঠিক সেই দিনই তার জীবনের বড় ধরণের কোনো সমস্যা হয়ে থাকে। সেই ছোট বেলায়বৃষ্টিতে ভিজে এসে মার খাওয়ার পর জ্বর আসা, মানিকের সাথে যেয়ে ২০ টাকা বাজি ধরে পুরোটাই হেরে আসার ঘটনা সবিস্তারে বলল। সাদেক শুনে বলল, “তুমি মনে হয় ভয় পেলে এইসব স্বপ্ন দেখো। সাদা পোশাক পরে তোমাকে আবার কে খুন করতে আসবে?” 

ধীরে ধীরে ওদের মাথা থেকে ক্যাসিনোর ভূত মাথা থেকে বের হয়ে গেল। নিজেরাই নিজেদের সান্ত্বনা দিতে লাগল, “টাকা আয় করতে হয়। জুয়া খেলে বড় লোক হওয়া যায় না।” কিন্তু সমস্যা হলো আরেক জায়গায়। জব্বার ও সাদেকের দু জনেরই বাড়ির থেকে টাকা ফেরত চেয়ে পাঠাল। জব্বারের বোনের বিয়ে আর সাদেকের ছোট ভাই মধ্য প্রাচ্যে চাকরি নিয়ে যাবে, সে জন্য খুব তাড়াতাড়ি টাকা লাগবে। অপেক্ষার কোনো সুযোগ নাই। ওদের ধারণা ছিল টাকাগুলোকে কমপক্ষে তারা দ্বিগুণ করতে পারবে। বাড়িতে বলেছিল ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করবে। একেবারে অল্প সময়ের মধ্যে টাকা তূলে আনতে পারবে। ওদের চোখের সামনে অন্যরা ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে পথে বসলেও নিজেদের কলাকৌশল সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা ছিল। তাদের দেয়া প্রশিক্ষণ নিয়ে আঠার বছরের রঞ্জন কি দারুণ খেলছে। প্রায়ই পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে।

ওইদিকে রহমত মোল্লার চালের কল বিক্রি হয়ে গেল। সব খরচ দেয়ার পরেও আড়াই লক্ষ টাকা হাতে এলো। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি একটা মুদির দোকান কিনবেন। এখনই অবসর নেয়ার সুযোগ নাই। ছেলে এখনও তেমন রোজগার করতে পারছে না। ইদানীং প্রায়ই টাকা চাচ্ছে। তিনি আশা করছেন মুদির দোকান থেকে যা আসছে, সেটা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলে যাবে। ছেলেকে জানালেন তার পরিকল্পনার কথা। রঞ্জন উত্তরে কিছু বলল না। নিজের কাছে খারাপ-ই লাগল। বাবাকে সে একটা মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছিল। বাবা বললেন দোকানটা কিনতে কিনতে মাস দুয়েক লেগে যাবে। এই কয়দিন তিনি বিশ্রাম করবেন। জীবনে তো আর কম ছুটাছুটি করলেন না। রঞ্জন বাবাকে আবার স্বপ্ন দেখাল, “এই তো বাবা আর কয়েক দিন পর পড়ালেখা শেষ হলেই আমি চাকরি আরম্ভ করবো। তখন আর আপনার চিন্তা থাকবে না।”

জব্বার ও সাদেক জানল রঞ্জনের বাবা রহমত মোল্লা তার ব্যবসা বিক্রি করে দিয়েছেন। হাতে তার এখন বেশ কিছু টাকা। দু জনের শলা পরামর্শ চলতে লাগল, ওই টাকা দিয়ে খেলে যদি ওদের টাকা উঠিয়ে আনা যায়। কথাটা রঞ্জন শোনা মাত্রই বেঁকে উঠল, “নাহ, সেটা হয় না। আপনারা নিজেদের টাকা হারিয়েছেন। এখন ওই টাকা হারালে আমাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে।” এলাকার বড় ভাই দু জন হাল ছাড়ল না, “আমরা এখন ক্যাসিনোর কৌশল বুঝে ফেলেছি। এইবার বাজি ধরলে আমরা অবশ্যই জিতব। তুমিও লাভ পাবে। আর আমরা আমাদের বাড়ির সমস্যা দূর করতে পারব। তুমি আমাদের আপন ছোট ভাইয়ের থেকেও বেশী। আমাদের জন্যে এই সামান্য উপকার করতে পারবে না। তোমার যখন থাকার জায়গা ছিল না, তখন আমরা তোমার থাকার জায়গা করে দেই নি?” 

রঞ্জন ঠিক ভরসা পেলো না। তবে একেবারে উড়িয়ে দিতেও পারলো না। দু জন তো কখনই তার আদর-যত্নের কমতি করে নি। কয়েকদিন ধরে বিষয়টা নিয়ে ভাবল। সে বাড়ির বড় ছেলে। ছোট তিনটে বোন আছে। বাবা-মা আছেন। সবার দায়িত্ব তো তার ঘাড়েই পড়ে। মানুষকে খুশী করতে গিয়ে এমন একটা ঝুঁকি নেয়ার কোনো মানে হয় না। মনটা খুব অস্থির হয়ে উঠল। মাথায় খেলল না এখন কি করা যায়। সম্ভবত জব্বার, সাদেকের কথাই ঠিক। তারা বেশ দীর্ঘ সময় ধরে জিতে আসছিল। সে নিজেও ওদের থেকে খেলা শিখেছিল। এবং সেও ওদের কৌশল ব্যবহার করে বিশাল না হলেও মোটামুটি টাকা জিতেছে। হয়তো ক্যাসিনোর ডিলাররা এমন কৌশল আরম্ভ করেছ যা দু জনের জানা ছিল না। ওরা চাইলে শুধু নিজেরাই খেলা বন্ধ রাখতে পারত। কিন্তু সেটা না করে রঞ্জনকেও খেলা থেকে দূরে রেখেছে। 

এক সন্ধ্যাতেই পুরো দু লক্ষ টাকা নিঃশেষ হয়ে গেল। পরের দিন পরীক্ষা থাকার কারণে রঞ্জন সাথে গেল না। কথা ছিল প্রথম রাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে খেলবে। যদি দেখে জব্বার, সাদেকের কৌশল কাজ করছে, তা হলে ক্রমান্বয়ে আরও টাকা দিয়ে বাজি ধরা হবে। না হলে খেলা বন্ধ করে চলে আসবে। বাসায় এসে চিন্তা করে বের করতে হবে নতুন কৌশল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ে একবারে দশ হাজার টাকার বেশী বাজি ধরা হবে না। সে জন্যে রঞ্জনের এতো বেশী টেনশন ছিল না। কিন্তু দু জনের আত্মবিশ্বাস এতোই বেশীই ছিল যে রঞ্জনের অগোচরেই পুরো টাকাটা সঙ্গে নিয়েছিল।

জব্বার ও সাদেক অনেক রাত করে ক্যাসিনো থেকে ফিরেছিল। ততক্ষণে রঞ্জন ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে ক্লাসে যাওয়ার তাড়া ছিল। তখন আবার রুম-মেটরা ঘুমাচ্ছিল। মোট কথা রঞ্জনের আর জানা হয় নি আগের রাতে ক্যাসিনোতে কি ফলাফল হয়েছিল। এই দিকে রঞ্জনের মেস থেকে বের হওয়া মাত্রই দু জনে চট করে উঠে পড়ল। আরম্ভ হলো পরিকল্পনা এখন কি করা যায়। জব্বার একেবারে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সাদেক ছিল বেশ শান্ত। সে ফিসফিস করে জব্বারকে কিছু একটা বুঝানো আরম্ভ করলো, “রঞ্জনের বোবা ধরা মানে স্লিপ প্যারালাইসিস রোগ আছে। ও যখন মানসিকভাবে কোনো আঘাত পায়, তখনই তার রাতে ঘুমের মধ্যে বোবা রোগ হয়। এরটা আবার একটু অদ্ভুত। সে দেখে সাদা আলখাল্লা পরা মানুষ ছুরি নিয়ে আসছে।” 

সাদেকের সাথে সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের এক অধ্যাপকের সাথে মাঝে মধ্যে আলাপ হতো। অনেকটা কৌতূহল নিয়ে রঞ্জন জানতে চেয়েছিল কেন রঞ্জন দেখে সাদা পোশাক পরা কিছু মানুষ তাকে খুন করতে আসছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, “ বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হলো গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। ঘুমের ওই পর্যায়টাকে বলা হয় র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম। রেম হল ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্লিপ প্যারালাইসিস চলাকালীন সময়ে শরীরের পেশীগুলো কাজ করেনা। এ কারণে এসময় মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়। তখন ভীষণ ভয়ে শরীর ঘেমে যায়। তুমি যার বর্ণনা দিয়েছ, তার অবস্থা আরও জটিল। তার জ্বর দিয়ে আরম্ভ হচ্ছে এবং সে দেখে বিশেষ পোশাক পরা মানুষ তাকে খুন করতে আসছে। তবে স্লিপ প্যারালাইসিস আক্রান্ত মানুষদের ক্ষেত্রে এ রকম সাদা পোশাক পরাদের হাতে আক্রান্ত হওয়াটা বেশ কমন।”

দু জন ছুটল সাদা আলখাল্লা, সাদা চোঙা টুপি, আর ধারাল ছুরি যোগাড় করতে। সাদেক আবার মুখ খুলল, “ওর নির্ঘাত পুরো টাকা হেরে যাওয়ার খবর শুনে মেলা জ্বর আসবে। তার পরে রাতে স্বপ্ন দেখবে দু জন সাদা পোশাকধারী মানুষ খুন করতে এসেছে। তবে আজকে স্বপ্ন না বাস্তব হবে। সে টু শব্দও করবে না। আজকেই বেচারার শেষ রাত হবে। আমরা ওর লাশ বস্তায় ভরে বুড়ি গঙ্গায় ফেলে আসব। কেউ জানতে চাইল বলব, ছেলেটা বাবার টাকা ফেরত দিতে গ্রামের বাড়ি যাবে বলে বের হয়েছিল। তার পর আমাদের সাথে আর যোগাযোগ নাই।” 

বিকালে রঞ্জন পুরো টাকা হেরে বসার খবর পেয়ে প্রথমে ঝিম মেরে রইলো। আধা ঘণ্টার মধ্যে বমি করতে করতে বেহুশ হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। জব্বার ও সাদেক ধরাধরি করে রঞ্জনকে উঠিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। কোনো অভিযোগ ছাড়াই দু জনে মিলে বমি পরিষ্কার করল। রুমের মধ্যে কেমন একটা উটকো গন্ধ হয়ে গেল। সাদেক এরোসল স্প্রে করে রঞ্জনের কপালে হাত দিলো। পরের মুহূর্তেই একগাল হাসি নিয়ে জব্বারের দিকে তাকিয়ে বলল, “এর মধ্যে ছোকরার জ্বরে গা পুড়া আরম্ভ করেছে......।”

(রচনাকালঃ ২০১৯)