অচিন মানুষ
“ভাই পশ্চিম কোন দিকে?”
“কেন পশ্চিম দিক দিয়ে কি হবে??”
“এই তো ভাই নামাজ পড়বো, গত কয়েক দিন ধরে নামাজ পড়তে পারি না। আজকে থেকে নামাজ আরম্ভ করবো।”
উপরের কথাগুলোর সময়কাল আশির দশকের প্রথম দিকে। স্থান সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিনগ্রাড শহরে বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির এক হোস্টেলে। তখনো সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় নি। বরং তারা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে স্কলারশিপ দিয়ে প্রচুর ছাত্র নিয়ে আসতো। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিনে খরচে রাশিয়া মানে সে সময়কার সোভিয়েত ইউনিয়নে যেয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ালেখা করেছে।
কথোপোকোথন হচ্ছে সদ্য বাংলাদেশ থেকে আসা সেলিম আর ফাইনাল ইয়ারের বাতেনের সাথে। নতুন যারা দেশ থেকে আসে, তাদের সবার সব কাজে বাতেন ভাই। এয়ারপোর্টে রিসিভ করা, হোস্টেলে উঠিয়ে গুছিয়ে দেয়া, ক্লাস কোথায় হবে-সেটা দেখিয়ে দেয়া; সব কাজেই বাতেন ভাই। সারাক্ষণ হাসিমুখে অন্যের উপকার করে চলেছে, একেবারে ক্লান্তিহীন। নতুনরা বিদেশের জীবনে কিছুটা অভ্যস্থ হওয়ার পরেই তার স্বস্তি।
সাধারাণত বাতেনের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর রেডি থাকে। তার পরে জানা না থাকলেও, তার সব ধরণের প্রচেষ্টাই থাকে প্রশ্ন কর্তাকে সাহায্য করার। কিন্তু অদ্ভুত। বাতেন প্রথমে প্রশ্ন শুনেও, না শুনার ভান করতে। সেলিম আবার প্রশ্নটা করল। তার উত্তরে বাতেন কিছুটা রূঢ় ভাবেই বললো, পশ্চিম দিক দিয়ে কি হবে।
সেলিম বুঝতে পারলো না, বাংলাদেশের মানুষ, তার উপরে মুসলমান; পশ্চিম দিক দিয়ে কি হবে, সেটা জানে না কি করে। না জানলে, বললেই পারে। সেখানে এইভাবে উত্তর দেয়ার বা কি হতে পারে।
পরের কথা বাতেনই আরম্ভ করল, রাশিয়ায় মানুষ পশ্চিম দিকে ফিরে মুখ করে নামাজ পড়ে না। এখান থেকে কাবা পশ্চিম না, সেটা দক্ষিণে। আর দক্ষিণ কোন দিকে সেটা অন্য কারোর থেকে জেনে নাও যেয়ে।
কথাটা বলেই বাতেন একটা বই খুলে দেখতে লাগলো। সেলিম বুঝলো, বাতেন চাচ্ছে সে এখন এখান থেকে চলে যাক। তার মাথার মধ্যে এলো না, এই প্রশ্নের মধ্যে এমন কি থাকতে পারে, যা জন্যে বাতেন একেবারে অন্য রকম আচরণ করছে।
২
রামপুরায় টেলিভিশন ভবন ছাড়িয়ে গেলে একটা ব্রিজ। ব্রিজ না বলে লম্বা একটা সাঁকো বলা যেতে পারে। ঝিলের সাথে যোগ করা একটা নালা। তার উপর দিয়ে এই সাঁকো। এই পর্যন্ত এসে পাকা রাস্তা থেমে গেছে। বাস থেকে নেমে, পায়ে হেটে রাস্তা পার হতে হয়। ডান দিকের জাম গাছ ছাড়িয়ে গেলে করিমের মুদির দোকান।
দোকানি করিম মুদির দোকানে মালিক হলেও, কাজে কর্মে বেশ রুচির ছাপ। এলাকার সবাই জানে দোকানি করিম ক্লাস এইট পর্যন্ত করেছিল। বাবা রংপুরের এলএমএফ ডাক্তার। তার ইচ্ছা ছিল ছেলে এমবিবিএস পাশ ডাক্তার হবে। কিন্তু করিমের মন গেল অন্য দিকে। রংপুর পাড়া শহরে নাটকে অভিনয় করে বেশ নাম কামিয়ে ফেললো। তাকে বয়সের তুলনায় দেখতে কিছুটা বড় লাগতো। অল্প বয়সেই নায়কের চরিত্রগুলো পাওয়া আরম্ভ করলো। নাম, ডাক, পরিচিতি মেলা বেড়ে গেল। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একেবারে নেশা চলে এলো। আর সাথে সাথে পড়ালেখায় মন কমতে কমতে, শেষে শূন্যে যেয়ে পৌঁছল।
বাবার সাথে বিরোধ আরম্ভ হয়ে গেল। তিনি ছেলেকে লাইনে ফেরানোর অনেক চেষ্টাই করলেন। কিন্তু বেয়াড়া ছেলে বাবার কোন উপদেশই নিল না। বরং অভিনয়ে আরও বেশী করে ঝুঁকে পড়লো। আসে পাশে জায়গাগুলো থেকে অভিনয়ের জনে ডাক আসা আরম্ভ হল। কিছু অর্থ কড়ি আসা আরম্ভ হল। রাস্তা-ঘাটে মানুষজন ঘুরে, কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। গ্ল্যামার মানে তারকা খ্যাতি যাকে বলে। কিছু মানুষ উপদেশ দিয়ে গেল, করিমের চেহারা ভাল, অভিনয় সুন্দর। তার ঢাকায় যেয়ে সিনেমায় নেমে পড়া উচিত। বুদ্ধিটা করিমের বেশ মাথায় ধরলো।
ষাটের দশকের সময়কার কথা হচ্ছে। বাঙালি নায়ক রহমান, নায়িকা শবনমকে দেশের সবাই এক নামে চিনে। তারা শুধু পূর্ব পাকিস্থান না, পশ্চিম পাকিস্থানে যেয়ে উর্দু ভাষায় অভিনয় করছে। করিমের মনে হল, তার পক্ষেও ওদের মত অভিনয়ে ডাক সাইটে হওয়া সম্ভব। শুধু ঢাকা না, লাহোরেও যেয়ে কাজ করবে। বাবাকে না জানিয়ে এক দিন করিম চলে এল ঢাকায়।
রংপুরে থেকে খবর নিয়ে এসেছে, ঢাকার সাত রাস্তার মোড়ে এফডিসি তৈরি হয়েছে। ওখানেই সিনেমা বানানো হয়। গেঁটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেই, হল। একবার কোন ডিরেক্টরের চোখে পড়ে গেলেই হল। করিম একেবারে নিশ্চিত, সে চোখে পড়বেই। তার মত লম্বা, ফর্সা, খাড়া নাকের মানুষ; বাঙালি মধ্যে বেশী দেখা যায় না। রংপুরের লোকেরা বলতো, করিম দেখতে একেবারে আরবের মানুষদের মত; পূর্ব পুরুষ নিশ্চয়ই ওই দিককার কোন দেশ থেকে এসেছিলেন।
কিন্তু সিনেমায় চান্স পাওয়ার বিষয়টা এত সহজ হল না। করিমের মত আরও অনেক বাঙালি একই চেষ্টা করছিল। বেশীর ভাগেরই ভাগ্যে নায়ক হওয়া লেখা ছিল না। কেউ কেউ কিছু সাইড পার্ট পর্যন্ত পেল। অন্যরা ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে নাটকে অভিনয় করলো। শুধু মনের টান থাকলে কি হয়? আয় রোজগার ছাড়া মানুষ কত দিন চলতে পারে? বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই, বাড়ির ছেলে বাড়িতে ফিরে গেল। রাজ্জাক হওয়া কপাল নিয়ে কয় জনই না জন্ম নেয়?
রংপুরের ডাক্তার পত্র করিম পুরো দু বছর লেগে থাকলো। যে সব কাজে ডাক পেলো, সেগুলো বিনা পয়সা কিংবা নাম মাত্র পয়সার কাজ। রংপুরে ফিরে যেয়ে বাবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে ইচ্ছা করলো না। এই দিকে ধার দেনা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছল, যে নতুন করে আর কারোর কাছে হাত পাতার জায়গা বাকী থাকলো না।
যার স্বপ্ন ছিল নায়ক হওয়ার কথা; সে ব্যবসা আরম্ভ করলো। পেটতো চালাতে হবে। ঢাকা স্টেডিয়ামে দক্ষিণের গেটের পাশে, পান-বিড়ির দোকান দিল। ছোট ব্যবসা এক সময়ে বিশাল হয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই অসম্ভব কিছু না। অর্থ থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। আবার স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা হল।
আত্মীয়-স্বজন, পুরনো বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ ছেড়ে দিল। অবশ্য বাবা মাঝে মাঝে চিঠি দিতেন, আমার পুত্র যে এত অকর্মণ্য হইতে পারে; তাহা আমি কল্পনায় ভাবিতে পারি নাই। রংপুরের শহরের এক জন বিখ্যাত ডাক্তারের সন্তান হইয়া, তুমি কি করিয়া ঢাকা শহরে পান-বিড়ি বিক্রয় কর, তাহা আমার কোনভাবেই বোধগম্য হইতেছে না।
বাবা, প্রতিটা চিঠির শেষের দিকে অনুনয় করে বলতেন, তোমার মাতা তোমার জন্যে সর্বদা মন খারাপ করিয়া, মুখ কৃষ্ণ বর্ণ করিয়া রাখে। তোমাকে এখনো বলিতেছি, তুমি বাসায় ফিরিয়া আসো। পরম করুণাময় আল্লাহ তা আলার অশেষ দয়ায়, আমার যাহা সম্পদ আছে, তাহা দিয়া সম্মান সহকারে তোমার জীবন চলিয়া যাইবে। তুমি বাড়িতে ফিরিটা আসিলে, আমি তোমার পূর্বের পলায়নপর, কাপুরুষ আচরণ ভুলিয়া যাইতে প্রস্তুত আছি।
করিম একেবারে প্রতিজ্ঞ, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, বাবার সামনে চোখে চোখ রেখে দাঁড়াবে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই, মা চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠালেন। সেও এক মাত্র সন্তান; তারও বাবামাকে দেখতে কিছু দিন মন প্রচণ্ড অস্থির হচ্ছিল। তাদেরকে সবার সামনে হেয় করার জন্যেও একটা চাপা কষ্টও ছিল। করিম বাবা মাকে দেখতে রংপুর রওয়ানা দিল।
বাড়ি থেকে ফিরে রামপুরার সেই সাঁকো ছাড়িয়ে কিছুটা জমি কিনলো। সেখানে বানানো হল, ‘মেসার্স করিম ভেরাইটি স্টোর’। দোকানের পেছনে কিছু দিন পরে টিনের চালের ঘর তোলা হল। কিন্তু করিম টাকা কোথায় পেল? সে গল্পে না হয় একটু পরে যাই।
৩
অনেকটা ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার অবস্থা। কথা হচ্ছিল, করিমের মুদির দোকান নিয়ে। আর আমরা চলে গেলাম কি-না সেই করিমের জীবন কাহিনীর ইতিবৃত্তে। ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম, দোকানি করিম বলেছে তার কাস্টমারদের। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সাড়া মহল্লায়। অনেকের কাছেই খুবই বিস্ময়কর ছিল করিমের এই চমকপ্রদ অতীত। যাই হোক ফিরে যাই, দোকানের গল্পে।
দোকানে সামনে তিন দিকে ঘিরে বেঞ্চ পাতা। সেখানে মানুষে বসে চা খায়, বিশ্রাম করে, আড্ডা দেয়। যা হয়, বাঙালি আড্ডার বেশীর ভাগ অংশ নিয়ে থাকে রাজনীতি। মাঝে মাঝে উত্তেজনা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়। তখন আবার সবার প্রিয় দোকানি করিম ভাই পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করে। শেষে করিম বিড় বিড় করে বলতে থাকে, দোকানে এত বড় করে লিখে রেখেছি, রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ। তার পরেও হৈ চৈ ঝামেলা করে। বেটারা অশিক্ষিত নাকি? এত টাকা দিয়ে সাইন টা বানালাম, তার পরেও ঝামেলা করে, সময় নষ্ট করে। গলার স্বর আরেকটু নিচু করে বলে, শালা বে আক্কেল সব। কামের কাম একটাও করে না। আবার রাজনীতি নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে।
আজ সকাল থেকেই মেজাজটা কেমন তেতে আছে। কামাল নামে দশ বছরের এক ছেলে তাকে দোকানের কাজে সাহায্য করে। সবাই তাকে পিচ্চি বলে ডাকে। বেঞ্চে বসা কাস্টমারদের কাছে চা, কলা, বিস্কুট পৌঁছে দেয়াই তার মুল কাজ। কামালের জন্যে, করিমের অগাধ ভালোবাসা। সুযোগ পেলেই তাকে পড়ালেখায় তালিম দেয়। ইতিমধ্যে করিম বানান করে পড়তে পারে। নিজের নামসহ সহজ কিছু শব্দ লিখতে শিখে ফেলেছে। ইচ্ছে আছে আগামী বছর প্রাইমারি স্কুলে, একবারে ক্লাস ত্রি তে ভর্তি করিয়ে দেবার। তার জন্যে করিমের একেবারে নিজের সন্তানের মত টান।
কামালের মা মানুষের বাসায় কাজ করে। ভোর বেলায় কাজে যাওয়ার সময়ে জানিয়ে গেছে, আজ কামাল আসতে পারবে না। বাবার সাথে চিড়িয়াখানা দেখতে যাবে। কামালের বাবা সুলায়মানের বেশ কিছু বউ আছে বলে শোনা যায়। বেশীর ভাগ সময়ে উধাও থাকে। কামাল আড় তার মাকে কোন সাহায্য করে না। তবে মাঝে মাঝে কামালের মা’র সাথে রাত কাটিয়ে যায়। কামালের মা আবার সুলায়মানকে দেখা মাত্র সব অভিযোগ ভুলে যায়। বেটা বদমায়েশ, একেবারে মনে হয় এক্সপার্ট কোন মৌ মাছি থেকে ট্রেনিং নিয়েছে। এক ফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে বেড়ায়, মধুর খোঁজে।
কথাটা শুনেই করিমের কঠিন কিছু বলতে মন চাচ্ছিল। কিন্তু করিমের মা কমলা খবরটা দিয়ে ছুটতে থাকলো। বাচ্চার খাবার জোগান দেয় না, আবার তাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবার খায়েশ। ফাজিল কোথাকার! আজকে সোমবার---কত ব্যস্ততা, কত কাজ। কাস্টমার একটু কমে আসলেই, মগ বাজারে যেয়ে মাল কিনে নিয়ে আসবে, চায়ের পাতা, কলা, ডিম, তেল; না কিনলেই না। সাথে চাল, আটা , তেল কিনতে হবে। সারদিন ধরে চা বিক্রি হয়, আর সেখানে চা না থাকলে, কেমন লজ্জার কথা হবে। ঘণ্টা দু য়েক কামাল দোকান চালিয়ে নিতে পারে। দোকান ব্যস্ত হওয়ার আগেই, সে বাজার নিয়ে ফিরে আসতে পারবে।
মাথায় ঢুকছিল না, কি করা যায়। দোকান বন্ধ করে যাওয়া যেতে পারে। না সেটাতে মনে সায় দিল না। কাস্টমার এসে ফিরে ফেলে লস হয়ে যাবে। ব্রিজের ওই ধারে নতুন দোকান খুলেছে, সেখানে কাস্টমার একবার গেলে যদি এখানে আসা বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে সে শুনেছে, চা, কলা আর বন রুটি --তিন টারই দাম ওখানে কম রাখছে। মেজাজটা আবার খারাপ হওয়া আরম্ভ হল। যেই তিনটা জিনিস সব চেয়ে বেশী বিক্রি হয়, সেগুলো কম দামে বিক্রি করছে। এ গুলো ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কি?
মুখের সব শক্তি দিয়ে এক দলা থু থু ছুঁড়ে ফেললো দূরে, একে বারে যত দূর সম্ভব। চোখ আর মুখ শক্ত করে, আবার বিড় বিড় করে বলল, ঢাকা শহরে কি আর কোন জায়গা ছিল না। একবারে তার দোকানের বগলে আরেকটা দোকান দিতে হবে, এটা কেমন কথা? ছোট গলায় একটা বড় ধরণের গালি দিয়ে বলল, বদমায়েশ অন্যের পেটে লাথি দিতে খুব আনন্দ লাগে। আমার বাসায় বউ, বাচ্চা আছে না?
করিম আবার বাস্তবে দিরে এলো। কি করা যায় এখন? বাসার থেকে কাউকে ডেকে বসিয়ে রাখা যেতে পারে। কিন্তু বাসার থেকেই বা কাকে ডাকবে? ছেলে, মেয়েরা কিছুক্ষণ পরে স্কুলে যাবে। বউ এখন নাস্তা বানাচ্ছে, তার পরে রান্না বান্নায় লেগে পড়বে। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে তার জন্যে নাস্তা নিয়ে আসবে। নাহ এই চিন্তাও বাদ দিল। বউকে সে দোকানে বসিয়ে যাবে না। পাড়ার বেটারা, বউয়ের সামনে বসে চা, সিগারেট খাবে, আড্ডা দিবে, সেইটা কেমন দেখাবে। এদেরকে বিশ্বাস করা যায় না; আড় চোখে কু দৃষ্টি দিতে পারে।
হঠাৎ ভাবনার ছেদ পড়লো। দু জন লোক সামনে দাঁড়িয়ে। লুঙ্গি, আলখেল্লা , মাথায় টুপি দেয়া, গালে দাঁড়ি। তাদের এক জন সালাম দিয়ে দিয়ে বলল, করিম ভাই কেমন আছেন?
করিম যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। এই দু জনকে বসিয়ে চট করে বাজার সেরা আসা যায়।
৪
সিনেমার নায়ক হতে না পারলে, করিম নিজের পরিবারের কাছে এক জন বিশাল বড় নায়ক। বউ সালমা; করিমের অনুমতি ছাড়া কোন কাজ-ই করে না। বয়সে পুরো দশ বছরের কম। প্রথম ছয় মাস আপনি আপনি করে কথা বলতো। এখন অবশ্য তুমি বলে সম্বোধন করলেও, প্রায়-ই তুমি কথাটা বলার পরে ফর্সা গাল লাল হয়ে যায়। স্বামী হলেও বড় ভাইয়ের বন্ধু। একই ক্লাসে পড়তো, একই সাথে খেলাধুলা করতো। বড় ভাইয়ের সাথে কত বার না ওদের বাসায় এসেছে। মনে হয় সালমা তখনও ফ্রক পরা ছাড়ে নি।
অনেকটা বাবার কথা রাখার জন্যে বিয়ে করা। তখন মাত্র সিনেমার নায়ক হওয়ার প্রজেক্ট বাতিল হয়েছে। স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনে নিজে পান-সিগারেট বিক্রি করে ব্যবসা করছে। মনে তখনো ক্ষীণ আশা, কোন ভাবে যদি কোন সিনেমার পরিচালকের চোখে পড়ে যায়; তা হলেই একে বারে কেল্লা ফতে । একেবারে জান-প্রাণ দিয়ে কাজ করে দেখিয়ে দিবে অভিনয় কাকে বলে। বাস্তবে ভাবনার কিছুই হল না। বরং মা জরুরী ভিত্তিতে ডেকে পাঠালেন। সব সময়ে বাবা চিঠি লেখেন। ওই একই রকম কথা। তার কি করে এমন good for nothing ছেলে হল। এখানে উল্লেখ্য, এলএমএফ ডাক্তার বাবা রেগে গেলে যেমন অনর্গল ইংরেজি বলা আরম্ভ করেন; অনেকটা তেমনি চিঠিতে ইংরেজি ব্যবহার হলে বুঝতে হবে, তিনি মহা বিরক্ত।
মায়ের চিঠি পেয়ে, করিম বাড়ি ফিরে দেখে, চারিদিকে সাজ সাজ রব। বেশ অনেক পরে আবিষ্কার হল, তারই বিয়ে তিন দিন বাদে, শুক্রবার জুম্মার দিনে। আত্মীয় স্বজন বিভিন্ন দিক থেকে আসা আরম্ভ করেছে। মা ভাত বাড়তে বাড়তে জানিয়ে গেলেন, শুক্রবার দিন করিমের সাথে সালমার বিয়ে। মাও কোন মতামত জানতে চাইলেন না, শুধু বললেন,তোর বাবা বলেছেন, এই বিয়ে না করে পালালে, তোকে ত্যাজ্য করে দিবে। সালমাকে তোর পাশে কিন্তু মানাবে ভারী। তোর বাবা আর তোর হবু শ্বশুর, বিয়ের দিয়ে হজে রওয়ানা দিবে। এখন যাই, হাতে মেলা কাজ। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবাইকে খাওয়াও, ঘুম পাড়াও---ঝামেলা তো আর কম না। এখন তুই ঠিক কর, বিয়ে করবি নাকি ত্যাজ্য হয়ে সব খোয়াবি।
বিয়ের পর দু জনের অস্বস্তির কোন সীমা ছিল না। কিন্তু সেটা ভাঙতে থাকলো দ্রুত গতিতে। উত্তাপে, বরফ তো গলবেই। নর-নারী পাশাপাশি থাকলে, ভালোবাসা হয়তো হয়েই যায়। চোখের দৃষ্টি থেকে ছোঁয়া, ছোঁয়া থেকে ধরা, ধরা থেকে পুরোটা পাওয়া যদি হয়ে যায়, তা হলে অবাক হওয়ার বেশী অবকাশ থাকে না। দুটো শরীর এক করার মধ্যে কত যে আনন্দ, দু জনেই বেশ তাড়াতাড়ি সেটা আবিষ্কার করলো।
এক সপ্তাহ থাকার প্ল্যান করে এসেছিল। সে জায়গায় এক মাস পার করে দিল। শুধু মনে হত সারাক্ষণ বউটাকে জড়িয়ে থাকতে। কিংবা রাত যদি মেলা, মেলা মানে ইয়া লম্বা হত। বিয়ের পর পর এ রকম চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক। বাস্তবতা হঠাৎ করেই করিমের সামনে এসে হাজির হল। বাবার বাড়িতে বউ নিয়ে থাকতে সম্মানে বাঁধলো। তিন মাসের মধ্যে বাড়ি ভাড়া করে সালমাকে নিয়ে যাবে বলে এলো। ফিরে আসার দিন সালমা ভীষণ কান্না জুড়ে দিল। এক মাসের মধ্যে এক জোড়া মানুষের মধ্যে কেমন টান তৈরি হয়ে গেল। একেই নিশ্চয়ই ভালোবাসা বলে। কিংবা বিয়ের পরে প্রেম।
করিম ঢাকায় আসার পরে প্রথম চিঠিতেই খবর পেল, সে বাবা হতে চলেছে। তিন মাসের মধ্যেই মা আর সালমাকে নিয়ে এলো। প্রথম মেয়ে শাকেরা হল। বাবা হজে যাবার আগে তার বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে দিলেন। সন্তানকর জন্যে পুরো এক লাখ দিলেন। সেই টাকা নিয়েই করিম ঢাকায় ফিরলো। ডাক্তার বাবা কিছু দান করলেন। সবার থেকে বিদায় নিয়ে দুই বেয়াই মিলে রওয়ানা দিলেন হজের উদ্দেশ্যে। যেতে লেগে যাবে প্রায় তিন মাস। পানির জাহাজ, উটের পিঠ আর পায়ে হেটে গন্তব্যে পোঁছতে হবে।
করিম রামপুরা ব্রিজ ছাড়িয়ে ঝিলের ধারে চার কাঠা জমি কিনলো। জায়গাটা খুব মনের মত হল। এখন একটু নিরিবিলি হলেও, কিছুদিনের মধ্যে যে একটা চালু জায়গা হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে একেবারে ১০০ ভাগ নিশিত। কাছেই টেলিভিশন হচ্ছে। সেখানেই কত মানুষ কাজ করবে। প্রথমে দোকান হল। কিছুটা ব্যাবসা চালু হওয়ার পরে, দোকানে পিছনে বাড়ি তুললো। ভাড়া বাড়ি ছেড়ে মা, মেয়ে, বউকে নিয়ে সংসার আরম্ভ করলো।
দোকানের আসে পাশে মানুষ জন বসত গড়া আরম্ভ করল। কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো জায়গা ভরে গেল। ব্যাবসা বেশ ভালই চলতে লাগলো। আয়ের টাকা দিয়ে কিছুটা সচ্ছলতা মুখ দেখল। দু বছর পরে মেঝ মেয়ে শম্পা হল। তারও তিন বছর পরে, পুত্র সন্তান বাতেন পৃথিবীতে এলো। দেখতে দেখতে সংসার একেবারে ভরে উঠলো। জীবনের সব কিছু মনে হয় পাওয়া হল। ভুলেই গেল, এক সময়ে সে ভাবতো সিনেমার নায়ক না হতে পারলে, জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে।
৫
ফিরে আসি আবার মেসার্স করিম ভেরাইটি স্টোরের সামনে।
করিম খুঁজছিল কিভাবে বাজারে যাওয়া যায়। নতুন পরিচিত দু জন মানুষকে দেখে সে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এক জনের বয়স ষাটের মত হবে। অন্য জন বেশ কম বয়সের। উচ্চতা একই। দাঁড়ির রং দেখে বয়স কিছুটা অনুমান করা যায়। বয়স্ক মানুষ দাঁড়িতে সম্ভবত মেহেদি মাখেন। সামনের কয়েকটা দাঁত নেই। তার কথা অন্য দের বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হয়। তার সঙ্গী যদি দেখে অন্য জনের কথা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে; সে তখন আবার কথাটা পুনরাবৃত্তি করে দেয়।
বয়স্ক মানুষ করিমকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি মিয়া কালকে মাগরিবে না মসজিদে আসার কথা ছিল?
করিমের ঠিক বুঝতে পারলো না, কি বলছে। মনের মধ্যে কত রকম জোয়ার ভাটাই না বয়ে যাচ্ছে। একটু আগে ছিল মনের মধ্যে দুনিয়ার সব বিরক্তি। তার পরে আশার একটা আলোকচ্ছটা। বুড়ো চাচার কথা তেমন বুঝলো না। মনে হল কেমন শ শ শব্দ হচ্ছে। যাই হোক চাচার সাথে থাকা সিদ্দিক মোল্লা, চাচার কথা ব্যাখ্যা করলো।
করিম উত্তরে জানালো, বিভিন্ন ঝামেলায় থাকার জন্যে সময় করে উঠতে পারে নি। ওদের বসতে বলে, দু জনের হাতে দু কাপ চা ধরিয়ে দিল। তার পরে ইনিয়ে বিনিয়ে জানাল, তার সমস্যার কথা। পিচ্চিটা আসবে না। তার পরে আজকে আবার বাজারে না গেলেই না। উনারা যদি কিছুক্ষণ বসেন, তা হলে করিম চট করে বাজারের কাজটা সেরে আসতে পারে।
সিদ্দিক মোল্লা চাচার কানে কানে কি যেন বলল। করিমের কথাটা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে দিল। তার পরে দু জনে শলা পরামর্শ চালালো । সিদ্দিক মুখ খুললো, ভাই সাহেব , আপনি গেলে আমরা তো ব্যবসা চালাতে পারব না। তার চেয়ে আমাদেরকে বাজারের লিস্টটা দেন; আমরা জিনিষ পত্র কিনে এনে দেই।
করিমের প্রস্তাবটা মনে ধরলো। ব্যবসাটা চলতে থাকবে, বাজারটাও হবে। অনেকটা সাপ মরলো, লাঠি না ভাঙ্গার দশা। তবে বাজারের টাকা মাত্র কয়েকদিনের চেনা মানুষদের হাতে তুলে দিতে মনটা খচ খচ করছিল। যদি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। করিম কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে, বাজারের লিস্ট আর দুশো টাকা ওদের হাতে তুলে দিল। এক শ টাকা কমিয়ে দিল। যদি ফিরে না আসে, তা হলে এক শত টাকা বাঁচবে। এত টেনশনে মুখটা দেখতে আরও বেশী মলিন হয়ে গেল।
চাচা হয়ত বুঝতে পারলেন, করিমের আশংকার কথা, মিয়া কোন চিন্তা কর না, এই যাব, এই ফিরবো। মগ বাজারের আড়তদার শেখ আলি আমার দোস্ত। সেই তোমার সব জিনিসের ব্যবস্থা করে দিবে। সে আমার সাথে অনেকবার ধর্ম প্রচারে বের হয়েছে।
করিম এই বার লজ্জাই পেল। ওরা কোন প্রয়োজন ছাড়াই তাকে সাহায্য করতে রাজী হয়েছে। আর সে কি-না মসজিদ থেকে এসেছে এমন ধার্মিক মানুষকে সন্দেহ করছে। ছি ছি।
ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে থলে ভর্তি বাজার নিয়ে ফিরলো। রিকশা সাঁকোর মাথায় নামিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে দুজনে জিনিষ পত্র বয়ে নিয়ে এসেছে। চাচার হাতেও মালামাল। বেচারা, ঘামছে তার পরেও করিমকে সাহায্য করতে পারায়; চোখ, মুখ উজ্জ্বল। সিদ্দিক মোল্লার কাছে বাকী জিনিশপত্র।
চাচা মিয়া বাজারের রসিদ হাতে ধরিয়ে বললেন, নব্বই টাকা কম পড়েছিল। আমরা দু জনে টাকা মিলিয়ে সেটা দিতে পেরেছি। অবশ্য আড়তদার শেখ আলি দাম বিশ টাকা কমিয়ে দিল। না হলে বিপদেই পড়তে হত। আমাদের দু জনের কাছে সব মিলিয়ে সত্তর টাকা ছিল।
করিমের এই বার চাচা মিয়ার কথা বুঝতে অসুবিধা হল না । সিদ্দিক মোল্লা করিমের মুখ দেখেই বুঝে নিল, তাকে আর চাচা মিয়ার কথা করিমকে বুঝিয়ে দেয়ার দরকার হবে না। আসলে আগ্রহ থাকলে যে কোন কাজই সহজ হয়। করিমের বাবার কথা মনে পড়ল। হজে যেয়ে হারিয়ে না গেলে, হয়ত বাবা দেখতে এ রকম বয়সেরই হতেন। কয়েকটা দাঁত পড়ে যেত। চাচা মিয়ার মত তার কথাও অস্পষ্ট হত।
বাজার নামিয়ে দিয়েই দু জনে তাড়াহুড়া করে চলে গেল। তাদের সাথে দেখা করার জন্যে মসজিদে কারো আসার কথা। করিমের ইচ্ছা ছিল দু জনকে বাসায় নিয়ে ভাত খাওয়ানোর। তাদের কোন ভাবেই রাজী করানো গেল না। ওরা নিজেদের সত্তর টাকা নিয়ে চলে গেল। চাচা মিয়া বললেন, টাকাটা তোমার থেকে নিতে না পারলে, ভাল লাগতো। কিন্তু আমাদের উপায় নাই। ওই কয়টা টাকাই আমাদের সম্বল।
যাবার বেলায়, দু জনেই বলে গেল, কালকে বাদ আছর অবশ্যই যেতে। তারা পরের দিনই কুমিল্লায় চলে যাবে। সেখানে পাঁচ দিন থাকার পর ফেনি। বাড়ি ফিরতে আরও এক মাস।
করিম অবাক হয়ে সিদ্দিক মোল্লাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপানারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন এক মাস। আরও এক মাস পর বাড়ি ফিরলে, সেতো দু মাস হয়ে যাবে। আপনাদের বউ বাচ্চাদের এত দিন কে দেখবে?
করিম মোল্লা মোলায়েম স্বরে জানলো, আমারা আল্লাহ’র কাজে বের হয়েছি। জায়গায় জায়গায় রাসুল (দঃ) সুন্নত পালন করি। মানুষকে ধর্মের দিকে দাওয়াত দেই। সেই জন্য আমাদেরকে ও আমাদের পরিবারকে আল্লাহ তা’ আল্লা খাসভাবে দেখেন।
সাথে সাথেই করিম ঠিক করে ফেলল, সে আগামী কাল মদজিদে যেয়ে ওদের কথা শুনবে। তারও ভাল কিছু করতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহ পথে সেও বের হয়ে পড়তে চায়। কালকে পিচ্চি না আসলে, দোকান বন্ধ করেই যাবে।
এত পরোপকারী দু জনকে মানুষকে সে আবার হতাশ করতে পারবে না।
৬
পৃথিবীতে কি বদলায় না? পৃথিবী সারাক্ষণ ঘুরছে সূর্যের চারিদিকে, সূর্যের আলোর মাত্রা একেক সময় একেক রকম, ঋতু পরিবর্তন হয়ে কখনো হয় বর্ষা, কখনো গরম কিংবা শীত। প্রকৃতিতে এত কিছু বদলালে, মানুষের উপর তার একটা প্রভাব পড়বেই। কথায় বলে নারীর মন এতই পরিবর্তনশীল যে সেটা নাকি কবিদের জন্যেও বুঝা মুশকিল। দোকানি করিম বদলানো আরম্ভ করলো। এক সময়ে স্বপ্ন ছিল সিনেমার নায়ক হওয়ার, যে কি না পরে সংসার কর্ম করে স্বস্থি খুঁজতে চেয়েছে।
তা সত্বেও কোথায় যেন না পাওয়ার শূন্যতা কাজ করতো। বাবা চাইতেন এমবিবিএস করাতে। সেটা করলে সমাজে হয়ত মাথা তুলে থাকা যেত। অভিনয়ের নেশায় পড়া লেখা পর্যন্ত হল না। বাবা তো মানতেই পারতেন না, তার ছেলে ম্যাট্রিক পর্যন্ত পাশ করে নি। তিনি মাকে দুঃখ করে বলতেন, সন্তানেরা বাবার থেকে এগিয়ে যায়। আমি, বাবা, কলকাতা থেকে পাশ করা ডাক্তার, আমার ছেলে কিনা ম্যাট্রিকই পাশ করে নি। এর থেকে বেশী লজ্জা আর কি হতে পারে।
মসজিদে চাচা মিয়া আর সিদ্দিক মোল্লাদের চিন্তা ভাবনা তার দারুণ লাগল। মানুষকে সংসার করার সাথে ধর্মের কাজ পালন করতে হবে। না হলে শেষ বিচারের দিনে কিভাবে আল্লাহ তা’ আলার সামনে যেয়ে দাঁড়াবে। শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকাতো “আশরাফুল মাখলুকাত”; সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের কাজ হতে পারে না। তাকে অন্যের মঙ্গলের জন্যে কাজ করতে হবে। ঘর-সংসার পরিবার আছে, থাকবে। এর মধ্যেই ত্যাগ স্বীকার করতে। মুসলমানদের যাতে হেদায়েত হয় এমন কাজ করতে হবে।
কিছু দিনের মধ্যে এই কার্যক্রম সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেল। তারা নিজেরা যেমন ধর্মীয় নিয়ম কানুন জেনে নিয়ে সেগুলো রপ্ত করে, তেমনি ধর্মের দাওয়াত দিয়ে বেড়ায়। প্রায়ই এ দিক-সেদিক যেতে হয়। অনেকের দেশের বাইরেও যায়, মানুষকে ধর্মের দাওয়াত দিতে। আমাদের প্রিয় নবী (দঃ) ধর্মের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। তাকে অনুসরণ করে কোন কাজ করলে ‘সুন্নাহ’ হয়। আল্লাহ’র কাছে তা বিশেষ গুরুত্ব পাবে। শেষ বিচারের দিন অনেক সম্মান পাওয়া যাবে। নেকির পাল্লা ভারী হবে। বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে।
করিমের মনে বিষয়টা খুব ধরলো। ধর্মের কাজ হবে, নতুন মানুষজনের সাথে পরিচয় হবে, সাথে সাথে দেশ বিদেশ ঘুরা হবে; এর থেকে আনন্দের জীবন আর কি হতে পারে? তবে কঠিন এক শর্ত আছে। নিজের খরচ নিজেকে জোগাতে হবে। এক জনের আয়ের টাকা দিয়ে অন্য জন আহার, ভ্রমণ করতে পারবে না। সাথে সাথে সংসারকে অবহেলা করা চলবে না।
এক সময়ে খুব শখ হত, দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে। অভিনয় জীবনের প্রথম দিকে আশে পাশে বেশ ঘুরে বেরিয়েছে। পরে মনে হয়েছিল, সিনেমা অভিনয়ের কারণে পশ্চিম পাকিস্তান যাওয়া হবে। লাহোরে যেয়ে মোগল আমলে তৈরি ‘শালিমার গার্ডেন’ দেখে আসবে। কিন্তু বাস্তবে সে রকম হল না। এখন ইসলাম ধর্ম ব্যাখ্যা আর প্রচারের জন্যে এ দিক, ও দিক যাওয়া যায়; তা হলে কিন্তু বেশ হয়। যারা এই কার্যক্রমের সাথে দীর্ঘ সময় ধড়ে জড়িত, তারা দেশের বাইরেও যায়। ভাবতেই ভাল লাগল, প্রায়ই সে বিভিন্ন দিকে যাচ্ছে। অভিনয়ের জন্যে না হলেও বা কি যায় আসে। বরং সে ভাল কাজ করবে; ধর্মের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করবে। এর থেকে বেশী সুখ আর কি সে হতে পারে?
একটা বিষয় মনে খুব খটকা দিল। বাসায় না থাকলে ঘর, সংসার, বাচ্চাদের কি হবে? ব্যবসাটাই বা কে দেখবে? আয় ছাড়া সংসারের খরচই আসবে কি করে? এই মুহূর্তে এই সব চিন্তা করে পিছপা হতে ইচ্ছে করলো না। অন্য যারা ধর্মের কাজে নিজেদের উৎসর্গ করেছে, তাদের সংসার ও কর্ম জীবন থেমে নিশ্চয়ই থেমে থাকে না। সংসারের অজুহাতে বৃহৎ উদ্দেশ্য থেকে সরে আসা যাবে না।
করিম চার মাসের মাথায় সুযোগ পেল পাঁচ দিনের সফরে চট্টগ্রামের নাজিরহাট ও তার আসে পাশের জায়গায় যাবার। সাথে আরও সাত জন যাবে। অন্যরা ঢাকার কয়েকটা মসজিদ থেকে। সাথে দল নেতা থাকবে। তিনি সবাইকে প্রশিক্ষণ দিবেন। মসজিদে নামাজ পড়া আর রাতে ঘুমানো, অন্য সময়ে মানুষদের ধর্মীয় কাজে উদ্বুদ্ধ করা। নিজের জীবন অন্যদের মঙ্গলের জন্যে উৎসর্গ করা যাবে, সেটা ভাবতেই মনটা ভরে উঠলো।
করিম ঠিক করলো তার সাধের ‘মেসার্স করিম ভেরাইটি স্টোর’ বিক্রি করে দিবে। তা ছাড়া সারাক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকলে পৃথিবীর কিছুই দেখা, জানা হবে না। দোকান কেনার ক্রেতা পেতে বেশী সমস্যা হল না। তবে সে জমির অর্ধেক চেয়ে বসলো। প্রয়োজনে সে এ জন্য কিছু টাকা বেশী দিতে রাজী আছে। করিম ভাবলো এই জায়গার তেমন কোন ব্যবহার নাই। কয়েকটা ফলের গাছ, বাকীটুকু আগাছা উঠে জঙ্গলের মত হয়ে গেছে। পেছনের অর্ধেকের তার টিনের চালের বাসা। পুরো জমির অর্ধেক বিক্রি করে দিলেও , বাড়ি সামনে মোটামুটি জায়গা খালি থাকবে। তাতেই বেশ চলে যাবে। অকারণে বাড়তি জমি রাখার কোন মানে হয় না।
আরও কিছু হিসেব করলো করিম। ইদানীং কম্পিটিশন আসার কারণে দিনে দিনে ব্যবসা কমে যাচ্ছিল। তার পরে সাহায্যের জন্যে মানুষ পাওয়া যায় না। মন মেজাজ কোন ভাবেই শান্ত রাখা যায় না। এইটা হয়ত উপরওয়ালার আলামত। তার দায়িত্ব শুধু নিজের পরিবার নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। সে বের হয়ে পড়বে। ঘাড়ে এত দায়িত্ব নিয়ে কোনভাবেই এক জায়গায় বসে থাকা যায় না।
স্ত্রী সালমা জানতোই না, স্বামী ব্যবসা আর অর্ধেক জমি বিক্রি করে দিয়েছে। শুধু এত টুকু স্বামীর মুখ থেকে শুনল, টাকা পয়সা আল্লাহ-ই দেয়; তিনি সংসার চলার ব্যবস্থা করে দিবেন।
৭
আরম্ভ হল করিমের নতুন জীবন। মাসের বেশীর ভাগ দিন বাড়ির বাইরে কাটতে লাগলো। বাসায় থাকলেও, মসজিদে চলে যেতো নামাজ পড়তে কিংবা পরবর্তী সফরের ব্যাপারে আলোচনা করতে। পরিবারে দেয়ার মত সময় বের করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ালো।
এ দিকে আরেকটা সমস্যা দ্রুত প্রকট হতে লাগলো। কথায় বলে না, বসে থাকলে রাজার ভাণ্ডারও শেষ হয়ে যায়। করিমের দোকান আর আংশিক জমি বিক্রি টাকা দু বছরের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ধানী জমি থেকে যে টাকা আসতো, তাও কমা আরম্ভ হল। কিভাবে যেন করিমের কর্মকাণ্ড বর্গা চাষিদের কান পর্যন্ত যেয়ে পৌঁছল। মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে না হলে, কয় জনই বা সঠিক হিসেব দেয়!
সালমা স্বামীকে সংসার জীবনে ফিরিয়ে আনার বহু চেষ্টাই করলো। কিন্তু না করিম কোনভাবেই শুধুমাত্র সংসার-পরিবার নিয়ে লেগে থাকতে দাজি হল না। সালমা অনেকবার বলেছে, বাসায় এক কন্যা,এক পুত্র আছে। পরিবারের পুরুষ বাসায় না থাকলে, পাড়ার লোকরা অনেক ঝামেলা করে, অনেক অসভ্য কথা বলে। বিশেষ করে মেয়েটার উঠতি বয়স; তাকে অনেকে বিরক্ত করে।
কোন লাভ হল না। সালমাকেই হাল ধরতে হল। কিছুটা পড়া লেখা জানা ছিল বলে রক্ষা। টাইপিং শিখে নিল। টেলিভিশন ভবনে টাইপিস্টের কাজ পেতে, বেশী বেগ হল না। যে টাকা বেতন পেত, তা দিয়ে টেনে টুনে সংসার চলত। পাড়ার মানুষেরা সালমা থেকে আড় চোখে তাকাত। ফিস ফিস করে বাজে মন্তব্য করত, বাড়ির বাইরে কাজ করলে কি আর স্বামী বাসায় থাকে।
কথাগুলো শুধু সালমা না; শাকেরা, বাতেনকে পর্যন্ত শুনতে হত। তার মায়ের কারণেই না-কি বাবা দেশান্তরি হয়েছে। মা পর পুরুষের সাথে কাজ করে, না ঢলাঢলি করে, সেটা সবাই জানে। হি হি।
সন্তানরা ভালো করেই জানে, তাদের মাকে কেন ঘর হতে বের হয়ে আয় রোজগার করতে হচ্ছে। মাকে নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য তাদের সহ্য হয় না। কিন্তু মা বলে দিয়েছে, খবরদার ওদের কথায় কান দিবি না। তোরা পড়ালেখা করবি, জীবনে কিছু একটা করবি। নিজের দায়িত্ব থেকে পালিয়ে থাকবি না।
করিম বাসায় ফিরলে স্ত্রী, পরিবারের নামে বিরূপ, কাল্পনিক সব কাহিনী শুনতো। স্ত্রী, সন্তানের মুখের কিছু শুনতে না চেয়ে, পড়শিদের কথাই ঠিক মনে করলো। যা করা উচিত না, তাই করলো। নিজের স্ত্রীকে দুশ্চরিত্রা আখ্যায়িত করলো। আরেক দিক মাংসে লবণ কম হয়েছে বলে, সালমাকে ভীষণ কটূক্তি করল। সালমা নিজেকে সামলাতে না পেরে বললো, বউয়ের পয়সায় খাও, বউয়ের পয়সায় ঘুরে বেড়াও, আর কথায় কথায় তাকে অপমান কর, লজ্জা করে না? কাপুরুষ কোথাকার!
করিম এ ধরণের উত্তরের জন্যে প্রস্তুত ছিল না। পৌরুষে বাঁধলো। ছেলে, মেয়ের সামনে তাদের মাকে অপমান করেই ক্ষান্ত হল না, প্রহার আরম্ভ করলো। শাকেরা, বাতেন দু জনেই চেষ্টা করলো মাকে বাবার হাত থেকে উদ্ধার করতে। করিম সে দিন ওদের তিন জনকেই বেদম প্রহার করলো। সালমার ঠোট ফেটে রক্তাক্ত হল, শাকেরা মাথায় ব্যথা পেল। বাতেনের গালে চড় পড়লো কয়েকবার। বেচারা ছিটকে পড়লো, ছোট শরীর, এত বড় আঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিল না। পরের দিনই করিম বের হয়ে পড়লো, ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য। পুরো এক মাসের সফর, এই বার। সালমার আলমারিতে যা টাকা পয়সা ছিল, সাথে নিয়ে নিল।
পরিবারের অন্য সদস্যরা কে কি খাবে, কি ভাবে চলবে, সেটা নিয়ে মাথা ঘামলো না।
এই ভাবে চলতে থাকলো দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। সালমা অল্প কিছু টাকা আলমারিতে রেখে, বাকী টাকা অন্য জায়গায় লুকিয়ে রাখতো; যাতে করিম খুঁজে না পায়। করিম বিষয়টা সহজেই ধরে ফেললো। আবার উত্তম মাধ্যম, বল , বল, বাকী টাকা কোথায়। না হলে মেরেই ফেলব। অবশ্য সালমা, শাকেরা, বাতেন ঠিক করেছে, দিনের পর দিন অভুক্ত থাকার থেকে কিছুক্ষণ মার খাওয়া ভাল।
এর মধ্যে সালমা সিদ্ধান্ত নিলো শাকেরার বিয়ে দিয়ে দিবে। এই বাড়ির থেকে তাড়াতাড়ি যাওয়ার মধ্যেই মেয়েটার শান্তি। ঘটকর বেশ কিছু ছেলের খবর এনে দিল। মেয়ে পছন্দ হলেও, বাবা কিছু করে না করে না, আবার মায়ের রোজগারে সংসার চলে শুনে পিছিয়ে পড়লো। তার পরে পাড়ার লোক জনদের নানা কথা শুনে অনেকটা ভয় পেয়ে পালিয়ে যেত।
এত কিছু সত্ত্বেও এক জায়গায় কথা বার্তা অনেক দূর এগুলো। ছেলে বিদেশ থাকে। লন্ডনে না কি রেস্টুরেন্ট আছে। মেলা টাকা পয়সা। বিয়ে করেই মেয়ে নিয়ে যাবে। ছেলে দেশে আসবে তিন সপ্তাহের জন্যে। ছেলের বাড়ি থেকে চ্যাংড়া দু জন লোক আসলো মিষ্টির হাড়ি নিয়ে। জানালো একজন চাচা, এক জন মামা। জানালো ছেলের বাবা-মা মারা গেছে সেই ছোট বেলায়।
মেয়ের বাবাকে নিয়ে তেমন কোন প্রশ্ন করলো না। কোন যৌতুক দাবী করলো না। ছেলের ছবি দেখে; মা, মেয়ে দু জনের পছন্দ হল। বাতেনকে ছবি দেখিয়ে বলা হল, এই দেখ তোর দুলা ভাই। তুই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলো, তোকেও বিদেশ নিয়ে যাবে। সেখানে যেয়ে তুই সাহেব মেমদের সাথে ইউনিভার্সিটিতে পড়বি। ছেলের মামা তাই বলে গেছে। বাতেনের ভাবতেই ভাল লাগলো। বিদেশ যাবে, টাই-কোট পড়বে, ইংরেজিতে কথা বলবে। বাতেন হিসেব করলো, সে এখন ক্লাস টেনে পড়ে। দু বছর পরে ইন্টারমিডিয়েট। অনেক লম্বা সময় মনে হল। কিন্তু মাকে ছেড়ে যাবে কি করে? সে একা যাবে না। যেভাবেই হোক মাকেও বিদেশ নিয়ে যাবে। বেচারি অনেক কষ্ট করছে। তার একটু আরাম দরকার।
সালমা যেদিন চূড়ান্ত কথা দিল, তার দু দিন পরে করিম বাসায় এলো। সালমা অনুনয়-বিনয় করে করিমকে বলল, যাও একটু খবর নিয়ে এসো। করিম একেবারে তেলে বেগুনে রেগে উঠলো, আমার সাথে ফাইজলামো। কথা দেয়ার আগে একবার আমার কথা চিন্তা করলে না। এখন বলে খবর নিয়ে আসতে। আমি এর মধ্যে নাই। তোমাদের যা ইচ্ছা তাই কর। আমি কালকে ভারত যাচ্ছি। সেখানে তিন মাস ধরে ধর্মের কাজ করবো। আমার হাতে কোন সময় নাই।
সালমা এ বার বেশ শক্ত গলায় বলল, সংসার থেকে ধর্ম বড় হলে, আমি সেই ধর্ম মানি না। আমাদের নবী (দঃ) তার নিজের সংসারকে কখন অবহেলা করেন নি।
করিমের পৌরুষ আবার আঘাতগ্রস্থ হল, হারামজাদি তোর থেকে আমার ধর্ম শিখতে হবে। জানিস আমি ধর্ম প্রচার করে বেড়াই।
ছেলে মেয়ের সামনে সালমাকে আবার স্বামীর হাতে প্রহৃত হতে হল। ছেলে মেয়েরা চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে দেখল। মা’কে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না।
এর পরের ঘটনাপঞ্জি সংক্ষিপ্ত বলা যায়। শাকেরা আসলে মেয়ে পাচারকারী দলের শিকার হয়েছিল। ভুয়া পাত্র এসে তাকে বিয়ে করে নিয়ে যায়। মাস তিনেক কোন খবর ছিল না। সালমা আর বাতেন অস্থির হয়ে শাকেরার খোঁজ করেছিল। তাদের কাছে ছেলের মামা, চাচার যে ঠিকানা ছিল, সেখানে যেয়ে তাদের কোন হদিস পাওয়া গেল না। শেষে শাকেরার চিঠি এলো, মা, আমাকে তোমাদের জামাই নারায়ণগঞ্জ টান বাজার বেশ্যা পাড়ায় বিক্রি করে দিয়েছে। আমার এখন কত বর, কত জামাই। মা তোমরা আমাকে নিয়ে আর ভেবো না। ভুলে যেও, তোমাদের একটা মেয়ে ছিল। তোমার আর বাতেনের জন্যে আমি সব সময় কাঁদি। শুধু বাবাকে বল, আমার এই অবস্থার জন্যে সে দায়ী। আমাকে যারা এখানে বিক্রি করেছে, তার থেকে বেশী আমি তাকে ঘৃণা করি।
এক মাসের দুটো মৃত্যু হল। প্রথমে খবর এল করিম ভারতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার লাশ ওখানেই দাফন করা হয়েছে। কি অদ্ভুত দু সপ্তাহের মাথায়, সালমাও স্বামীকে অনুসরণ করে পরকালে যাত্রা করলো। এক জন মানুষ আর কতই বা দুঃখ কষ্ট, অভাব, যন্ত্রণা নিতে পারে?
৮
বাতেন ঠিকই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলো এবং বিদেশে এল। তবে লন্ডন না রাশিয়া। রামপুরা অঞ্চলের যে রাজনৈতিক নেতা, তার কানে গিয়েছিল এতিম বাতেনের গল্প। তিনি আসলে মায়ের অফিসের এক সহকর্মীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলেন। তিনিই বাতেনের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়া আর সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশের যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
সেই বাতেন এখন পৃথিবীর সব কিছুই ভালোবাসে। শুধুমাত্র ধর্ম থেকে দূরে থাকে। তার পরেও, আতঙ্কে ভুগে আবার অন্য কেউ না জীবন থেকে ধর্মকে বড় করে দেখে; কাছের আপন মানুষদের জীবনগুলো না ধ্বংস করে দেয়। বাতেন নিজের কাছে পণ করেছে, মানুষ যাতে ধর্মের মধ্যে নেশাশক্ত না হয়ে পড়ে; সেই চেষ্টাই সে করে যাবে।
তাই বাতেন কাউকে কোন দিকে ফিরে নামাজ পড়তে হবে, সেটা জানিয়ে দিতে ভয় পায়। পাছে তার জীবনে এই নেশার কারণে যা ঘটেছে; সে রকম আবার অন্য কেউ না ভুক্তভোগি হয়ে যায়।
আগস্ট ১৮, ২০১৫
www.lekhalekhi.net